পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবিত ও মৃত।
৩১

লইয়াছে। যখন ইহার বাপ মা কেহই নাই, তখন আমি ইহাকে কি করিয়া ত্যাগ করি!—এই বলিয়া তিনি কোন রূপ সন্ধান লইতে ক্ষান্ত ছিলেন, এবং কাদম্বিনীকেও এই অপ্রীতিকর বিষয়ে প্রশ্ন করিয়া ব্যথিত করিতে তাঁহার প্রবৃত্তি হইত না।

 তখন তাঁহার স্ত্রী তাঁহার অসাড় কর্ত্তব্যবুদ্ধিতে নানাপ্রকার আঘাত দিতে লাগিল। কাদম্বিনীর শ্বশুরবাড়িতে খবর দেওয়া যে তাঁহার গৃহের শান্তিরক্ষার পক্ষে একান্ত আবশ্যক, তাহা তিনি বেশ বুঝিতে পারিলেন। অবশেষে স্থির করিলেন হঠাৎ চিঠি লিখিয়া বসিলে ভাল ফল নাও হইতে পারে, অতএব রাণিহাটে তিনি নিজে গিয়া সন্ধান লইয়া যাহা কর্ত্তব্য স্থির করিবেন।

 শ্রীপতি ত গেলেন, এদিকে যােগমায়া আসিয়া কাদম্বিনীকে কহিলেন “সই, এখানে তােমার আর থাকা ভাল দেখাইতেছে না! লােকে বলিবে কি!”

 কাদম্বিনী গম্ভীর ভাবে যােগমায়ার মুখের দিকে তাকাইয়া কহিল “লােকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি?”

 যােগমায়া কথা শুনিয়া অবাক্ হইয়া গেল। কিঞ্চিৎ রাগিয়া কহিল “তােমার না থাকে, আমাদের ত আছে? আমরা পরের ঘরের বধূকে কি বলিয়া আটক করিয়া রাখিব!”

 কাদম্বিনী কহিল “আমার শ্বশুরঘর কোথায়?”

 যােগমায়া ভাবিল—“আ মরণ! পােড়াকপালী বলে কি?