বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির উপায়।
৪৩

বিবাহের অনতিবিলম্বে সন্তানাদি না হওয়াতে পিতার অনুরোধে এবং নূতনত্বের প্রলোভনে আর একটি বিবাহ করেন। এই বিবাহের পর হইতে যথাক্রমে তাঁহার উভয় স্ত্রীর গর্ভে সাতটি কন্যা এবং একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করিল।

 মাখন লোকটা নিতান্ত সৌখীন এবং চপল প্রকৃতি, কোন প্রকার গুরুতর কর্ত্তব্যের দ্বারা আবদ্ধ হইতে নিতান্ত নারাজ। একে ত ছেলেপুলের ভার, তাহার পরে যখন দুই কর্ণধার দুই কর্ণে ঝিঁকা মারিতে লাগিল তখন নিতান্ত অসহ্য হইয়া সেও একদিন গভীর রাত্রে ডুব মারিল।

 বহুকাল তাহার আর সাক্ষাৎ নাই। কখন কখন শুনা যায়, এক বিবাহে কিরূপ সুখ তাহাই পরীক্ষা করিবার জন্য সে কাশীতে গিয়া গোপনে আর একটি বিবাহ করিয়াছে; শুনা যায়, হতভাগ্য কথঞ্চিৎ শান্তি লাভ করিয়াছে। কেবল দেশের কাছাকাছি আসিবার জন্য মাঝে মাঝে তাহার মন উতলা হয়, ধরা পড়িবার ভয়ে আসিতে পারে না।

কিছু দিন ঘুরিতে ঘুরিতে উদাসীন ফকিরচাঁদ নবগ্রামে আসিয়া উপস্থিত। পথপার্শ্ববর্তী এক বটবৃক্ষতলে বসিয়া নিশ্বাস ছাড়িয়া বলিলেন “আহা, বৈরাগ্যমেবাভয়ং। দারা পুত্র ধন জন কেউ কারো নয়। কা তে কান্তা কস্তে পুত্রঃ।” বলিয়া এক গান জুড়িয়া দিলেন।