পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
বিচিত্র গল্প

দেখিতে দেখিতে লোকে লোকারণ্য। পাড়ার লোকে অধিকাংশই বলিল সেই বটে, কেহ বা সন্দেহ প্রকাশ করিল। কিন্তু বিশ্বাস করিবার জন্যই লোকে এত ব্যগ্র, যে, সন্দিগ্ধ লোকদের উপরে সকলে হাড়ে চটিয়া গেল। যেন তাহারা ইচ্ছাপূর্ব্বক কেবল রসভঙ্গ করিতে আসিয়াছে; যেন তাহারা পাড়ার চৌদ্দ অক্ষরের পয়ারকে সতের অক্ষর করিয়া বসিয়া আছে, কোন মতে তাহাদিগকে সংক্ষেপ করিতে পারিলেই তবে প।ড়াশুদ্ধ লোক আরাম পায়; তাহারা ভূতও বিশ্বাস করে না, ওঝাও বিশ্বাস করে না, আশ্চর্য্য গল্প শুনিয়া যখন সকলের তাক্ লাগিয়া গিয়াছে তখন তাহারা প্রশ্ন উত্থাপন করে। একপ্রকার নাস্তিক বলিলেই হয়। কিন্তু ভূত অবিশ্বাস করিলে ততটা ক্ষতি নাই, তাই বলিয়া বুড়া বাপের হারা ছেলেকে অবিশ্বাস করা যে নিতান্ত হৃদয়-হীনতার কাজ। যাহা হউক্, সকলের নিকট হইতে তাড়না খাইয়া সংশয়ীর দল থামিয়া গেল।

 ফকিরের অতি ভীষণ অটল গাম্ভীর্য্যের প্রতি ভ্রূপেক্ষমাত্র করিয়া পাড়ার লোকেরা তাহাকে ঘিরিয়া বসিয়া বলিতে লাগিল—“আরে আরে, আমাদের সেই মাখন আজ ঋষি হয়েছেন, তপিস্বি হয়েচেন! চিরটা কাল ইয়ার্কি দিয়ে কাটালে আজ হঠাৎ মহামুনি জামদগ্নি হয়ে বসেচেন।”

 কথাটা উন্নতচেতা ফকিরের অত্যন্ত খারাপ লাগিল,