পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
বিচিত্র গল্প।

বলিয়া প্রতীত হইত না। বরং তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্র বিবাহ করিয়া অতি ভদ্র গৃহস্থের ন্যায় আলস্যভরে ঘরে বসিয়া পত্নীর আদরে প্রতিদিন স্ফীত হইতে থাকিবে এ সম্ভাবনা তাঁহার নিকট নিয়তিশয় হেয় বলিয়া প্রতীত হইত। তিনি কঠিনভাবে বলিতেন, পুলিন আগে উপার্জ্জন করিতে আরম্ভ করুক্ তার পরে বধূ ঘরে আনিবে। পিসিমার মুখের সেই কঠোর বাক্যে প্রতিবেশিনীদের হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইত।

 ঠাকুরবাড়িটি জয়কালীর সর্ব্বাপেক্ষা যত্নের ধন ছিল। ঠাকুরের ন ন স্নানাহারের তিলমাত্র ত্রুটি হইতে পারিত না। পূজক ব্রাহ্মণ দুটি দেবতার অপেক্ষা এই একটি মানবীকে অনেক বেশি ভয় করিত। পূর্বে এক সময় ছিল যখন দেবতার বরাদ্দ দেবতা পূরা পাইতেন না। কারণ, পূজক ঠাকুরের আর একটি পূজার প্রতিমা গোপন মন্দিরে ছিল। তাহার নম ছিল নিস্তরিনী। গোপনে ঘৃত দুগ্ধ ছানা ময়দার নৈবৈদ্যে স্বর্গে নরকে ভাগাভাগি হইয়া যাইত। কিন্তু আজ কাল জয়কালীর শাসনে পূজার ষোলাআনা অংশই ঠাকুরের ভোগে আসিতেছে উপদেবতাগণকে অন্যত্র জীবিকার অন্য উপয় অন্নেষণ করিতে হইয়াছে।

 ধির যত্নে ঠাকুর বাড়ির প্রাঙ্গণটি পরিষ্কার তক‍্তক্ করিতেছে—কোথাও একটি তৃণমাত্র নাই। একপার্শ্বে মঞ্চ অবলম্বন করিয়া মাধবী লতা উঠিয়াছে, তাহার শুষ্কপত্র পড়িবামাত্র জয়কালী তাহা তুলিয়া লইয়া বাহিরে ফেলিয়া দেন।