পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
বিচিত্র গল্প।

হইতে আসিয়া সমস্ত গাছের পাতার মধ্যে ঝর‍্ঝর্ করিয়া উঠে, এবং হঠাৎ নদীর জল জাগিয়া উঠিয়া ভাঙ্গা ঘাটের সোপানের উপর ছলাৎছলাৎ করিয়া আঘাত করিতে থাকে। এইসমস্ত আকস্মিক অলস শব্দের মধ্যে বহুদূর তরুতল হইতে একটি রাখালের বাঁশিতে মেঠো সুর বাজিতেছে। রাজীব মহামায়ার মুখের দিকে চাহিতে সাহসী না হইয়া মন্দিরের ভিত্তির উপর ঠেস্ দিয়া দাঁড়াইয়া একপ্রকার শ্রান্ত স্বপ্নাবিষ্টের মত নদীর দিকে চাহিয়া আছে।

 কিছুক্ষণ পরে মুখ ফিরাইয়া লইয়া রাজীব আর একবার ভিক্ষুকভাবে মহামায়ার মুখের দিকে চাহিল। মহামায়া মাথা নাড়িয়া কহিল—“না, সে হইতে পারে না।”

 মহামায়ার মাথা যেমনি নড়িল, রাজীবের আশাও অমনি ভূমিসাৎ হইয়া গেল। কারণ, রাজীব সম্পূর্ণ জানিত মহামায়ার মাথা মহামায়ার নিজের নিয়মানুসারেই নড়ে, আর কাহারও সাধ্য নাই তাহাকে আপন মতে বিচলিত করে। প্রবল কুলাভিমান মহামায়ার বংশে কতকাল হইতে প্রবাহিত হইতেছে—সে কি কখনো রাজীবের মত বংশজ ব্রাহ্মণকে বিবাহ করিতে সম্মত হইতে পারে! ভালবাসা এক এবং বিবাহ করা আর। যাহা হউক্, মহামায়া বুঝিতে পারিল তাহার নিজের বিবেচনাহীন ব্যবহারেই রাজীবের এতদূর স্পর্দ্ধা বাড়িয়াছে; তৎক্ষণাৎ সে মন্দির ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল।