পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দালিয়া।

 জুলিখা কতকটা আনমনে কতকটা আমিনাকে কহিল “তা তােকে দোষ দেওয়া যায় না, তুই তখন নিতান্ত ছােট ছিলি। কিন্তু একবার ভাবিয়া দেখ্ পিতা তােকে সব চেয়ে বেশি ভাল বাসিতেন বলিয়া তােকেই স্বহস্তে জলে ফেলিয়া দিয়াছিলেন। সেই পিতৃদত্ত মৃত্যুর চেয়ে এই জীবনকে বেশি প্রিয় জ্ঞান করিস্ না। তবে যদি প্রতিশােধ তুলিতে পারিস্ তবেই জীবনের অর্থ থাকে।”

 আমিনা চুপ করিয়া দূরে চাহিয়া রহিল। কিন্তু বেশ বুঝা গেল সকল কথা সত্ত্বেও বাহিরের এই বাতাস এবং গাছের ছায়া, এবং আপনার নবযৌবন এবং কি একটা সুখস্মৃতি তাহাকে নিমগ্ন করিয়া রাখিয়াছিল।

 কিছুক্ষণ পরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিল “দিদি, তুমি একটু অপেক্ষা কর ভাই। আমার ঘরের কাজ বাকি আছে। আমি না রাঁধিয়া দিলে বুঢ়া খাইতে পাইবে না।”


তৃতীয় পরিচ্ছেদ।

জুলিখা আমিনার অবস্থা চিন্তা করিয়া ভারি বিমর্ষ হইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। এমন সময় হঠাৎ ধুপ্ করিয়া একটা লম্ফের শব্দ হইল, এবং পশ্চাৎ হইতে কে একজন জুলিখার চোখ টিপিয়া ধরিল।

জুলিখা ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া কহিল “কেও!”