পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্য Conforconfort) অতীত কালের বহু গুপ্ত রহস্য আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিকের কোদালের আগায়। ইজিপ্ট, সিরিয়া, ব্যাবিলোনিয়া তাদের প্রাচীন মহিমা গোপন রাখতে পারে নি, এবার পালা পড়েছে পারম্ভ দেশের ••• খীশুখৃষ্ট জন্ম গ্ৰহণ করবার ৩৩১ বছর পূর্বে আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট যখন পার্সিপোলিস সহর লুঠ-তরাজ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিলেন, তারপর সর্বপ্রথম আজ ( ১৯৩৩-৩৫ ) প্ৰাচীন পার্সিপোলিসের রহস্যময় কাহিনী লোকসমাজে প্রচারিত হচ্ছে । পার্সিপোলিস কথাটার অর্থ ‘পারস্তের সাহর’। এ রকম নাম হবার মানে এই যে, এই সহরের আসল নামটি যে কি ছিল, তা কারো জানা নেই। প্রাচীন যুগের কুয়াসার আড়ালে তা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে বহুকাল। কেবল এইটুকু জানা আছে যে, ২৫ • • বছর আগে পারস্ত-সম্রাট দারায়ুস দ্বারা এই সহর নিৰ্ম্মিত হয়-যার পুত্র জ্যারাকসেস বা খয়হর্ষ এথেন্স নগরীর নিকটবৰ্ত্তী শৈলচুড়ায় বসে ভােলামিসের যুদ্ধ ও গ্ৰীক বহর কর্তৃক পারস্য বহরের পরাজয় লক্ষ্য করেছিলেন । বৰ্ত্তমান শিরাজ সহরের ৩৮ মাইল উত্তর-পূর্ব কোণে রৌদ্রদগ্ধ মর্ভদন্ত উপত্যকায় এই বিশাল প্রাচীন কালের নগরীকে- তার সমাধি, বিরাটকায় প্রস্তরমূৰ্ত্তি, রাজপ্রাসাদ, স্নানাগার, হারেম, স্তম্ভাবলী-বহুকাল ধরে মরুভূমির কাটা বালুরাশির নীচে কৌতুহলী চক্ষুর দৃষ্টি থেকে গোপন রেখেছিল-দরায়ুস ও খায়হর্ষের সাধের এই রাজধানীকে এতদিনে চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভূক্ত ওরিয়েণ্টাল ইনষ্টিটিউট খনন করে দিনের আলোয় প্ৰকাশ করবার ভার निटमgछ । এর ভারপ্রাপ্ত নেতা প্ৰসিদ্ধ প্রত্নতাত্বিক চালাস ব্রেষ্টেড । খনন-কাৰ্য্যের পরিচালক ডাঃ আৰ্ণষ্ট হার্জফিলড । এরা যে শুধু এখানে রাজপ্রাসাদ ও শিল্পদ্রব্য বার করেছেন তা নয়, পারস্য-সম্রাটের একটা পুস্তকাগার। পৰ্যন্ত এরা বার করেছেন, তাতে বিশ হাজার কাদার ইটের গায়ে কিউনিফৰ্ম্ম বা বানিমুখো অক্ষরে লিখন আছে। ব্রেষ্টেড বলেন, এইটাই সৰ্ব্বাপেক্ষা মূল্যবান আবিষ্কার। এই ইটগুলির পাঠোদ্ধার করলে সুদূর অতীত যুগের কি ছবিই না পাওয়া যাবে ! কি ভাবে দারায়ুসের আমলের নাগরিকের দিন কাটাত, দিনে মৰ্দন্ত, মরুভূমির বালুর ঝড়ে ঝালসাপোড়া হয়ে সান্ধ্য জ্যোৎস্নায় তারা প্রাসাদের বিস্তৃত সোপানাবলীতে বসে বসে চারিধারের দুর পর্বতমালার দিকে চেয়ে কি গল্প করত, কোন সে সব হারাণো প্রেমের কাহিনী ? না বুঝে তাদেরও যে সব প্রিয় হয়ত রাগ করে বসে থাকত নিতান্ত নিষ্ঠুরের মত—ঐ সব ইন্টের গায়ে তীক্ষুধার লেখনীর ফলার মুপে চিরকালের মত খোদাই হয়ে আছে সেই সব অবুঝ প্রিয়ের উদ্দেশে লিখিত কত বেদনা-নমা নিবেদন । পারম্ভ গোলাপ আর বুলবুলের দেশ হলে কি হবে, প্রেমের পথে গোলাপ ফুটে থাকে না, কোনো কালেই বুলবুলও ডাকে না, সে পথ ঐ মর্ভ্যুদস্ত মরুভূমির পথ। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ইউরোপীয় ভ্ৰমণকারী ও প্রত্নতত্ত্বানুসন্ধিৎসুদের কাছে পার্সিপোলিস সুপরিচিত। একটা দেওয়ালের গায়ে লেখা আছে, “হেনরী ষ্ট্যানলি, নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড, ১৮৭০”। প্ৰাচীন নগরীর নানা প্ৰস্তরময়