পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্য Sct আসিরীয়া ও ব্যাবিলোনিয়া থেকে নর্দামার গঠনপ্রণালী শিক্ষা করে। আসিরীয় রাজ্য ছিল বৰ্ত্তমানে যা উত্তর ইরাক এবং দক্ষিণ-ইরাকে ছিল সেকালের ব্যাবিলোনিয়া। বাগদাদ সহর থেকে ৫০ মাইল উত্তর-পূর্বে টেল-আসমার প্ৰান্তরে ওরিয়েণ্টাল ইনষ্টিটিউট খৃষ্টপূর্ব ২৬০০ বৎসরের একটি প্রাচীন ব্যাবিলোনীয় নগরী খুঁড়ে বার করেছেন, তাতে সহরের বড় বড় রাজপথের তলায় এই ধরণের পয়ঃপ্ৰণালী নিৰ্ম্মিত দেখা যায়। পার্সিপোলিস সহর থেকে কিছু দূরে মর্ভর্দস্ত প্ৰান্তরের বক্ষে ছয় হাজার বৎসরের প্রাচীন একটী প্রস্তরযুগের গ্রামের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এই গ্রামের একটা ঘরের মেঝেতে কতকগুলো মৃৎপাত্র ছিল, তাদের গায়ে নানা রকম ফুল লতা-পাত আঁকা ।। ঘরের দেওয়াল রাঙা গিরিমাটী দিয়ে রং-করা । আধুনিক ঐতিহাসিকগণের ধারণা-এশিয়ার এই সব অঞ্চলে মানব-সভ্যতা প্রথম জন্মলাভ করে। চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভূক্ত ওরিয়েণ্টাল ইনষ্টিটিউট বৰ্ত্তমানে এই সভ্যতার ইতিহাসের উপকরণ খুঁজতে ব্যস্ত। উত্তরে তুরস্ক, দক্ষিণে সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন ও ইজিপ্ট, পূর্বে পারস্য - সব শুদ্ধ জড়িয়ে প্রায় ৪০০০ বর্গমাইল ব্যাপী স্থান এদের কৰ্ম্মক্ষেত্র। এই সব অঞ্চলের জনহীন মরুপ্ৰান্তরের মধ্যে কত প্রোথিত প্ৰাচীন নগরীর অস্তিত্ব আছে, তার ঠিকানা নেই। এরা তার একটা তালিকা করছেন। ১৯৩২ সালে ইম্পিরিয়াল এয়ারওয়েজ কোম্পানীর একটা মনোপ্লেন ভাড়া করে এরা কায়রো সহরের হেলিওপোলিশ এরোড্রোম থেকে ওড়া সুরু করেন এবং প্যালেষ্টাইন, উত্তর ও দক্ষিণ-ইরাক, পূর্বে পারস্য উপসাগরের তীরবন্তী বন্দর আব্বাস এবং উত্তর-পশ্চিমে শিরাজ, পার্সিপোলিস সমস্ত দেশ উড়ে বেড়িয়ে দেখেন, কোথায় কোন প্রাচীন নগরীর চিহ্ন আছে ও আকাশ থেকে তাদের ফটো নেন। ইরাকের মরুভূমিতে সে সময় ছিল ঝড়ের সময়, কারণ ওঁরা উড়তে সুরু করেন মার্চ মাসে ; দিন রাত মরুবালুর ঝড় বইছে, উপরে নীচে অন্ধকার, ইরাকে আবার এই ঝড়ের বালি ১৫,০০০ হাজার ফুট উচুতে পৰ্য্যন্ত ঠেলে ওঠে-পাইলট শুধু বেতারে ইম্পিরিয়াল এয়ারওয়েজ কোম্পানীর রেডিওষ্টেশনগুলি থেকে পথ জেনে নিয়ে চোখ বুজে এরোপ্লেন চালালে দিন দুই। তখন সকলে বললে, এতে কোন কাজ হবে না, এত ধূলোতে ফটো নেওয়া যায় কি করে ? নাম মাটীতে, ঝড় থামতে দাও । এরোপ্লেন থেকে পার্সিপোলিস ও বহু প্ৰাচীন স্থানের সুন্দর ফটোগ্ৰাফ নেওয়া হয়েছে। এই এরোপ্লেনের চালক ছিলেন বিখ্যাত কাপ্তেন ওলি, যিনি এক সময়ে প্ৰিন্স অফ ওয়েলসের এরোপ্লেনের পাইলটের কাজ করেছেন। ওরিয়েণ্টাল ইনষ্টিটিউটের অন্যতম পরিচালক ডা: জেমস ব্রেষ্টেড বলেন : - “মানুষের সভ্যতার উত্থান ও পতনের ইতিহাস একটা গোলোকধাঁধার মত। এর সব খেই খুজে পাওয়া ভার। তবুও আমার মনে হয় প্রাচ্যদেশের এই সব অঞ্চলেই ওর চাবিকাঠির সন্ধান মিলবে। উত্তর-সিরিয়ায় এলেক্‌জাড়েট্টা ও আলেপ্পো সহর দুটোর মধ্যে চাটাল হুয়ুক নামে যে প্রাচীন নগরীর ধ্বংস্তুপ আছে, তার উপর দাড়িয়ে আমি দূরবীণ দিয়ে দেখেছি, চারিদিকের প্রান্তরের মধ্যে আরও পঞ্চাশটী প্রাচীন নগরীর স্তুপ বৰ্ত্তমান। আমরা পশ্চিম-এসিয়ার এই রকম ষোলটা স্তুপ খুড়বার ভার নিয়েছি—আমাদের বেশী টাকা নেই। ইউরোপ ও আমেরিকার অন্য অন্য প্ৰতিষ্ঠান যদি আমাদের মত এদিকে মন দেয়, তবে মানব সভ্যতার একটা অন্ধকার যুগে সত্যের আলোকপাত হবে। হাজার হাজার এরকম প্রাচীন নগরীর ধ্বংসস্তুপ রয়েছে সমস্ত পশ্চিম এসিয়ার মরুভূমিতে ছড়িয়ে ।”