পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sb ਵਿਚ বাজাতে বাজাতে মহাসমারোহে প্ৰবেশ করত । দোকানদারেরা তখন তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে দিত-কারণ, নিয়ম হচ্ছে এই যে, বন্দী দাসু্যরা যদি কোন দোকান থেকে কোন জিনিষ চায়-দোকানদারকে তখনই তা দিতে হবে। না দিলে সৈন্যেরা দিতে বাধ্য করবে। মাধু রাজকন্যার মৃত্যুর পরে তঁর অনুচরদের জমি দেওয়া হয়েছিল। ঐ জমি এখন তাদের বংশধরদের অধীনে আছে। তার চাষবাস ও বস্ত্ৰ বয়ন করে, সকলেই বেশ অবস্থাপন্ন এবং যদিও সংখ্যায় খুবই কম, কিন্তু তারা ক্ষমতাপন্ন। দসু্যদল তাদের অধীনস্থ অঞ্চলে প্রবেশ করতে সাহস করে না। ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে ধনী, সে স্থায়ী ঠাকুতে বাস করে, আর সকলে নিজের নিজের গৃহপালিত পশু নিয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়। এ অঞ্চলে পার্বত্য নেকড়ে বাঘের অত্যন্ত বেশী উপদ্ৰৰ-সে জন্য প্ৰত্যেকে বড় বড় গ্ৰেছাউণ্ড পোষে । সকল মেষপালকের সঙ্গেই দু’ পাঁচটা গ্ৰেছাউণ্ড থাকে-তারা যেমন প্ৰভুভক্ত, তেমনি উগ্ৰ প্ৰকৃতির। গ্রেহাউণ্ড মাথুরিয়ার সর্বত্র পাওয়া যায় নাএই কুকুর এদেশে অত্যন্ত মূল্যবান বিবেচিত হয়। গ্রেহাউণ্ড কেউ বিক্ৰী করে না, তবে উপহার দেয় বটে । গ্রেহাউণ্ড উপহার দেওয়া অত্যন্ত সম্মানের চিহ্ন বলে গণ্য হয়। ক্যান্টিলিওন নামক বিখ্যাত জেসুইটু চিত্রকরের অঙ্কিত মাধু-সম্রাটের প্রিয় কয়েকখানি গ্রেহাউণ্ডের ছবি পিপিং এর রাজপ্ৰসাদে আছে । মোঙ্গোলেরা কুকুরকে তিক্তির পাখী শিকার করতে শেখায়। শরৎকালে বনের ফল খেয়ে তিত্তির পাখী। এমন মোটা হ’য়ে পড়ে যে, তারা বেশীদূর উড়তে পারে না । কুকুরেরা তাদের উড়ন্ত অবস্থায় পেছনে পেছনে ছুটে যায়, এবং যেমনি জমিতে বসে-অমনি গিয়ে কঁাপিয়ে পড়ে ধরে । এ দেশে পশুচারণভূমি দাবাগ্নিতে পুড়ে প্রায়ই অকেজো হয়ে যায়। মোঙ্গোলের গ্রীষ্মের প্রারম্ভে মাথুরিয়ার বাসিন্দা একটি ফিসকিন তাতায়ী পরিবার। শুকনো ঘাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, আগামী বর্ষায় ভাল ঘাস খাবার জন্য-কিন্তু যখন বাইরের লোক এসে জমি নিয়ে বাস করে, তখন জমির দখল নিয়ে দুই দলে বিবাদ হয় এবং একদল অন্য দলকে জব্দ করবার জন্য মাঠের দীর্ঘ ঘাসে আগুন লাগিয়ে দেয় । আমরা একটা ছোট পাহাড়ের উপর দিয়ে মোটরলরিতে যাচ্ছিলাম। রাস্তা একদম ছিল না-যে দিকে চাই শুধুই বড় বড় ঘাস। আমাদের সঙ্গী সৈন্যেরা এই ঘাসে লাগিয়ে দিলে আগুন । মোটরলরি ছাড়বার আগেই বাতাসের গতি বদলে গিয়ে বিরাট আগুনের শিখা আমাদের দিকে ছুটে এল-আর একটু হলেই গিয়েছিলাম আর কি ! আমাদের সঙ্গে বেশী গ্যাসোলিন ছিল, তার টিন ফুটো হওয়ার দরুণ মাটীতে সর্বত্র গ্যাসোলিন ছড়াতে ছড়াতে যাচ্ছিল-তাতে একবার আগুন লাগলে আর কি রক্ষা ছিল ।