পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইংলেণ্ডের পল্পী (ሉ (ሶ —যদি এখানে তুমি আসি, থাকা আর খাওয়ার জন্যে তুমি দৈনিক চার শিলিং দিও। বেশ সস্তা বলেই মনে হ’ল-আমি মেয়েটার প্রতি আরও কৃতজ্ঞ হয়ে উঠলাম, যখন সে অগ্ৰিম কিছু টাকা চাইলে না ভাড়া বাবদ । চাইলে দিতে পারতাম না । আমরা আবার বাইরে ফিরে গেলে, মেয়েট বললে—তুমি এক পেয়ালা চা খাবে কি ? - যদি তৈরী থাস্কে দিতে পার, কিন্তু চা করার কষ্টের মধ্যে যে ও না । -চা করার কষ্ট আর কি ? তুমি বিস্কুট আর চিজ পছন্দ করা ? একটু পরে মেয়েটা একটা প্লেটে খানকতক ক্র্যাকার ও খুব খানিকটা চিজ নিয়ে এল। ইংরেজরা দিনে তিনবার খায়-ব্রেকফাষ্ট, লাঞ্চ আর ডিনার-এ ছাড়া বিকেলে চা খায়, রাত আটটার সময় আর একবার চা খায়, 4(<F 43i <Co high tea ! পরদিন ওদের বাড়ীতে ব্রেকৃফাষ্ট পেয়ে বুঝলাম ওরা ভালই খেতে দেয়। খাওয়ার পরে হাই স্ট্রীট বেয়ে চাকরী খুজতে বার হলাম। যতগুলো হোটেল ছিল কাছাকাছি, তাদের একটাতেও কোন কাজ খালি নেই। একটা হোটেলের কত্রী স্ত্রীলোক-স্ত্রীলোকটী আমায় দেখে হেসে উঠে বললে-কাজ খুজতে এসেছ ? তোমার চাকরীর দরকার কি ? তুমি দেখছি আর একজন পাগলা আমেরিকান-বোধ হয় তুমি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাজী ফেলেছ ধে, তুমি এই বাজারেও চাকরী যোগাড় করতে পার কি না। এই নিয়ে – ঠিক নয় কি, সত্য কথা বল তো ? ? পীলোকটীর কথা শুনে আমার কৌতুক হল, রাগও হ’ল। বললাম-কে বললে আমি অষ্ট্রেলিয়ান নাই ? আর সত্যিই কাজ খুঁজছি না ! সে একটু নরম হয়ে বললে-আমি ভেবেছিলাম তুমি আমেরিকান। তা, এখানে কোন কাজ খালি নেই। k- ta y ওয়েষ্টমুরল্যাণ্ড : ইংরাজী সাহিত্যে খ্যাত লোক উইণ্ডমিয়ায়ের অনতিদূরে। এ দেশের পাড়াগাঁয়ে একটা অদ্ভুত বিশ্বাস আছে যে, প্ৰত্যেক আমেরিকানই টাকার কুমীর। তাদের আর চাকরী করে খেতে হয় না। আমার স্বদেশ থেকে টুরিষ্ট দল এসে এদের মনে এ বিশ্বাসের সৃষ্টি করেছে। তাই হোটেল-কত্রীর ভুল ভেঙে দেবার জন্যে বললাম-তুমি সত্যিই আন্দাজ করেছ, আমি আমেরিকানই বটে, কিন্তু আমার পকেটে টাকা ঝম্ ঝিম্ করছে না। আমি নিজের খরচে কাজ করে চালিয়ে পায়ে হেঁটে সারা ইংলণ্ড বেড়াবা মতলব করেছি। হােটেল-কত্রী বললে—কাজকৰ্ম্ম এখানে পাওয়া যাবে না। তোমাকে বন্ধুর মত বলছি। সেখান থেকে বীর হয়ে অনেকগুলো রেষ্টরেন্ট, মদের দোকান খুঁজলাম-সর্বত্র এক কথা-চাকুরী কোণাও পালি নেই। অনেক কারখানা থেকে লোক ছাড়িয়ে দিচ্ছে-নতুন লোক নেওয়া তো দূরের কণা। এতক্ষণ পরে মনে হ’ল হাথাওয়ে ফাৰ্ম্মের চাকুরীটা না নিয়ে কি অন্যায় কাজই করেছি। পরদিন আবার পথে বেরিয়ে পড়লাম-ওয়েলসের বনাকীর্ণ পথে । আমার সামনে বড় পাহাড়শ্রেণী, পাহাড়ের ঢালুতে হিদারের বন, আর কিছু দিন পরে আগুনের মত রাঙা ছোট ছোট ফুল ফুটে পাহাড়ের ঢালুতে আগুন লাগিয়ে দেবে। একজন মেষপালক ভেড়া চরিয়ে ফিরছে, সে আকার্শে উড়ন্ত একটা সিন্ধু-শকুন দেখিয়ে বললে—ঝড়বৃষ্টি আসবে, পাখীটা কত নীচুতে উড়ছে, দেখছি না ? এই বেলা কোথাও আশ্রয় নাও ।