পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਵਿਚ ܣܘ এতক্ষণ আমি ৮• • • ফুটের উপর দিয়ে চলে এসেছি, কারণ আবহাওয়া আফিসে বলে দিয়েছিল, অন্ত উঁচু দিয়ে না গেলে অনুকুল বায়ু পাওয়া যাবে না। সকাল থেকে বেলা সাড়ে দশটা পৰ্যন্ত কি ভয়ানক কুয়াস চারিদিকে । যে দিকে চাই আকাশ দেখা যায় না, সমুদ্র দেখা যায় না, আমার এরোপ্লেনের ডানার দূর প্রান্তটা পৰ্যন্ত দেখা যায় না —শুধু আমি, আর ককপিট । আর আমার চালানোর যন্ত্রখানিও সামনে । পনের ঘণ্টা অনবরত চালানোর পরে কুয়াসা একটু একটু কাটতে আরম্ভ করল। ঘন কুয়াসার দেওয়ালের মধ্যে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গৰ্ত্ত দেখা দিল । যে কুয়াসা প্রাচীরে আমার এই পনের ঘণ্টা আবদ্ধ করে রেখেছিল, ওগুলো যেন তার গায়ে ফোটানো জানালা । সেই মুক্ত বাতায়নপথে আমি চেয়ে দেখলাম নিয়ের নীল সমুদ্র, প্ৰভাতের সূৰ্য্যালোকে উদ্ভাসিত অগণিত উৰ্ম্মিমালা । আমার বা দিকের প্রাচীরগাত্রে একটা বড় জানােলা খুলে গেল। সেই দিকে চেয়ে দেখি সমুদ্র-বক্ষে খুব বড় একখানা জাহাজ। আমার ভয় কেটে গেল, তা হ’লে কুয়াসায় আমি পথ হারিয়ে ভুল পথে যাই নি, জাহাজ যাতায়াতের পথ ধরেই চলেছি। আমি নেমে এলাম, মাত্র ১৫০০ ফুট ওপর থেকে জাহাজ খানার চারিদিকে প্ৰদক্ষিণ করে জাহাজের গতি ও গমনপথের সঙ্গে এরোপ্লেনের গতি মিলিয়ে দেখলাম। সেখানা বিখ্যাত ডলার লাইনের নতুন তৈরী জাহাজ ‘প্রেসিডেন্ট পিয়ার্স। জাহাজ থেকে বেতারে আমায় জানালে স্তানফ্রান্সিসকো বন্দর আর ৩০০ মাইল দূরে। আমি অত উঁচুতে আর না উঠে বাকী পথটুকু ১৫০০ ফুট উপর দিয়ে “চললাম। এরোপ্লেনে কোন জায়গা পৌছবার শেষ দু ঘণ্টা সকলের চেয়ে কষ্টকর। এখানেই দিগভ্ৰম হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। মেঘে ও দূরবত্তী উপকূলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। কোনটা মেঘ কোনটা বা জমি তা বুঝে নেবার উপায় নেই । দিক ভুলের সম্ভাবনা যেমন এখানে বেশী, তেমনি এখানেই আবার অর্জিত অভিজ্ঞতার চূড়ান্ত পরীক্ষা-ক্ষেত্র। যন্ত্রপাতি ও কম্পাস যেটা ঠিক দিক বলে নির্দেশ করছে, মানুষের মন বলে সেটা ঠিক দিক নয়। অনভিজ্ঞ লোক এখানে চোখের বশে চলতে চাইবে, যন্ত্রকে অবিশ্বাস করে। কিন্তু অভিজ্ঞ লোক জানে যে, যখন চোখ ও যন্ত্রের মধ্যে বিবাদ বেধে যাবে, তখন যন্ত্রকে বিশ্বাস করবে, চোখকে নয়। প্ৰথম জমি দেখা গেল কালিফোৰ্ণিয়ায় পিলার পয়েণ্ট । কিন্তু এত ঝাপসা দেখা গেল যে, আমার মনে হ’ল কালিফোৰ্ণিয়ার উপকূলে খুব মেঘ কি কুয়াস হয়েছে। আমার অনুমান ঠিক-আর.একটু এগিয়ে দেখি খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ডাইনে একটু ঘুরে গেলাম-একটা উঁচু পাহাড় যেন আমার দিকে ছুটে আসছে।--তারপরেই আমার এরোপ্লেনের নীচে জমি দেখা গেল । ** A. ছনোলুলু থেকে আমেরিকা মহাদেশে পৌছে গিয়েছি!! ঠিক আঠার ঘণ্টা লাগল। সেবার যখন একা আটলান্টিক মহাসাগর পার হই, তখন নামি গিয়ে আয়ারল্যাণ্ডে এক কৃষকের আলুর ক্ষেতে । এরোপ্লেনের এঞ্জিনের শব্দ শুনে তিনটি আইরিশ কৃষক ব্যাপার কি দেখতে এল। তাদের যখন বললাম। আমি আমেরিকা থেকে আসছি, তারা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে চুপ করে রইল। অর্থাৎ মুখের উপর ‘মিথ্যাবাদী’ বললে না । এবার ওকল্যাণ্ড এরোড্রোমে যে হাজার লোক জড় হয়েছিল, তাদের বলবার প্রয়োজন হল না, আমি কোথা থেকে আসছি। আমি ককপিট খোলবার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে ক্যামেরার খুঁটিখাট শব্দ শোনা গেল, মাইক্রোফোন নিয়ে লোক এগিয়ে এল আমি কি কৃথা বলি তাই বেতারে ধরবার জন্তে ।