পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓbም বিচিত্র-জগৎ কাসার বাসনের দোকান, কাপড়ের দোকান, কফিখানা, তামাকের দোকান। আমাদের ফটোগ্রাফের যন্ত্রপাতি দেখে বাজারপ্তদ্ধ লোক হঁ। করে চেয়ে রইল। বাজারে লোকের ভিড়ের ফটো নেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। অবশেষে আমি মাটীর ওপর একটা দাগ টেনে তাদের দাগের ওদিকে চুপ করে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে অনুরোধ করলাম। হিরাটের লোক বাস্তবিক খুব ভদ্র, তারা আমাদের অনুরোধ রাখলে, আমরাও ফটো নিলাম । আমাদের ক্যামেরার মধ্যে কি আছে, দু-একজন তা জানবার কৌতুহল প্ৰকাশ করলে। আমরা তাদের নিয়ে এসে দেখলাম। আফগানদের ভদ্রতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি, যখনই যার ফটো নিতে চেয়েছি, কি পুরুষ কি নারী, কেউ কখনো আমাদের অনুরোধ অগ্ৰাহ করে নি । একবার ছ’ সাত বছরের একদল ছোটছেলের ফটো নেবার জন্যে বলতে তারা নিজেদের মধ্যে কি পরামর্শ করে ভালমানুষের মত সবাই ক্যামেরার সামনে এসে র্যাফেলের আঁকা দেবদূতের মত শান্ত অবাক চোখে চেয়ে দাড়িয়ে রইল—যতক্ষণ আমরা না বল্লাম যে তোমরা এবার যেতে পারে, ততক্ষণ তারা একটুও নড়ল না। বালিকা-বিদ্যালয়ের ছাত্রীগণ । অবগুণ্ঠন ফেলিয়া দিলে ইহাদের সহিত আমেরিকার কোনও স্কুলের ছাত্রীদেরপোর্থক্য বোঝা কঠিন । আফগানের বালকের মত সরল 1 এদিকে বন্দুক এবং আধমণ ওজনের টোটার কোমরবন্ধ সঙ্গে না থাকলে তাদের মন ভাল থাকে না, পৃথিবী অন্ধকার দেখে, ওদিকে আবার হিরাট সহরের পাচীলের বাইরে মাঠে দীর্ঘকায় জোয়ান আফগান যোদ্ধা পোষা তিক্তির পাখীর সঙ্গে দৌড়বাজি খেলছে- সে একটা দেখবার জিনিস। পাখীও ছুটছে, সেও ছুটছে, মাঝে মাঝে আবার পাথরের আড়ালে হঠাৎ লুকিয়ে পড়ে পাখীকে কাছে আনবার জন্যে শিস দিয়ে ডাকছে। কেউ নেই হয়তো কোথায়, শুধু পায়তাল্লিশ বছরের দীর্ঘশ্মশ্ৰ আফগান জোয়ান ও তার পোষা ছোট্ট পাখীটি! হিরাট ও কান্দাহারের মধ্যে মোটরের পথে দুটাে তিনটে খরস্রোতা নদী পড়ে । গ্রীষ্মকালে অবশ্য জল কম থাকার দরুণ মোটর নদীতে নেমে অনায়াসে পার হয়ে যেতে পারে। সারাদিন রৌদ্রদগ্ধ মরুপথের মধ্যে দিয়ে মোটর চালিয়ে এসে ঠাণ্ডা নদীর জলে অবগাহন করে শরীর আমাদের জুড়িয়ে গেল। আমাদের বড় গাড়ীগুলো থেকে জিনিষপত্ৰ নামিয়ে ফেলে দড়ি বেঁধে টেনে পার করানো হল, নইলে বালিতে চাকা পুতে যায়। নদীয় কম্পিয়ান তীরে দৃষ্ট হাসিমুখ।