পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০০
বিচিত্র প্রবন্ধ

 দিনের পর দিন আসে, আমার কাছে তাহারা বিশেষ কিছুই দাবী করে না;—তখন হিসাবের অঙ্কে ভুল হয় না, তখন সকল কাজই সহজে করা যায়। জীবনটা তখন একদিনের সঙ্গে আর-একদিন, এক কাজের সঙ্গে আর-এক কাজ দিব। গাঁথিয়া-গাঁথিয়া অগ্রসর হয়, সমস্ত বেশ সমানভাবে চলিতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো খবর না দিয়া একটা বিশেষ দিন সাতসমুদ্রপারের রাজপুত্রের মতো আসিয়া উপস্থিত হয়, প্রতিদিনের সঙ্গে তাহার কোনো মিল হয় না—তখন মুহুর্ত্তের মধ্যে এতদিনকার সমস্ত ‘খেই’ হারাইয়া যায়—তখন বাঁধা-কাজের পক্ষে বড়োই মুস্কিল ঘটে।

 কিন্তু এই দিনই আমাদের বড়োদিন; এই অনিয়মের দিন,এই কাজ নষ্ট করিবার দিন। যেদিনটা আসিয়া আমাদের প্রতিদিনকে বিপর্য্যস্ত করিয়া দেয়—সেই দিন আমাদের আনন্দ। অন্যদিনগুলো বুদ্ধিমানের দিন, সাবধানের দিন, আর এক-একটা দিন পুরা পাগ্‌লামির কাছে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ-করা।

 পাগলশব্দটা আমাদের কাছে ঘৃণার শব্দ নহে। ক্ষ্যাপা নিমাইকে আমরা ক্ষ্যাপা বলিয়া ভক্তি করি—আমাদের ক্ষ্যাপা-দেবতা মহেশ্বর। প্রতিভা ক্ষ্যাপামির একপ্রকার বিকাশ কিনা, এ কথা লইয়া য়ুরোপে বাদানুবাদ চলিতেছে—কিন্তু আমরা এ কথা স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত হই। প্রতিভা ক্ষ্যাপামি বই কি, তাহা নিয়মের ব্যতিক্রম, তাহা উলট্‌-পালট্‌ করিতেই আসে—তাহা আজিকার এই খাপ্‌ছাড়া, সৃষ্টিছাড়া দিনের মতো হঠাৎ আসিয়া যত কাজের লোকের কাজ নষ্ট করিয়া দিয়া যায়—কেহ বা তাহাকে গালি পাড়িতে থাকে, কেহ বা তাহাকে লইয়া নাচিয়া-কাঁদিয়া অস্থির হইয়া উঠে!

 ভোলানাথ, যিনি আমাদের শাস্ত্রে আনন্দময়, তিনি সকল দেবতার মধ্যে এমন খাপ্‌ছাড়া! সেই পাগল দিগম্বরকে আমি আজিকার এই ধৌত