পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৪
বিচিত্র প্রবন্ধ

বেঁটে পরিপুষ্ট জামগাছ পূর্ব্ব উত্তরদিকে ঘাসের উপর এক-এক পোঁচ ছায়া টেনে দিয়েছে। আজ ওখানে একটিও গরু নেই, সমস্ত মাঠ শূন্য, সবুজ রঙের একটা প্রলেপ আছে কিন্তু তার প্রাচুর্য্য অনেক কম। ঐ আমাদের টগর বীথিকার গাছগুলি রোদ্দুরে ঝিলিমিলি এবং হাওয়ায় দোলাদুলি করছে। বাতাস এখনও তেতে উঠল না। নিঃশব্দতার ভিতরে ঐ রাঙা রাস্তায় গরুর গাড়ীর একটা আর্ত্তস্বর মাঝে মাঝে শোনা যাচ্চে—আর, কী জানি কী সব পাখীর অনির্দ্দিষ্ট ক্ষীণ আওয়াজ যেন নীরবতার সাদা খাতায় সরু সরু রেখায় ছেলেমানুষি হিজিবিজি কাট্‌ছে। আনি না, কেন আমার মনে পড়ছে বহুকাল আগে সেই যে হাজারিবাগে গিয়েছিলুম—ডাকবাংলার সাম্‌নের মাঠে হাতাওয়ালা কেদারায় আমি অর্দ্ধশয়ান, রোদ্দুর পরিণত হয়ে উঠেছে, কাজকর্ম্মের বেলা হোলো— মাঝে মাঝে অনতিদুরে ঘণ্টা বাজে। সেই ঘণ্টার ধ্বনি ভারি উদাস। আজ হাটের দিনে হাট ক’রে পথিকরা রাস্তা দিয়ে ঘরে ফিরে চলেছে, কারো বা মাথায় পুঁটুলি, কারো বা কাঁধে বাঁক। আর সেই ঘণ্টার ধ্বনি যেন আকাশে নীরবে বাজছে, মূলতানে বলছে—বেলা যায়।


৮ ফাল্গুন, ১৩৩৫

 যারা স্বভাবতই কুঁড়ে তাদের যখন কাজে কিম্বা অকাজে পায় তখন তাদের টিকি দেখবার জো থাকে না। পদ্মার এক পাড়িতে যেমন নিচু বালির চর, অন্য পাড়িতে উঁচু ডাঙা এবং লোকালয়—ইদানীং আমার জীবনস্রোতে সেই দশ—একই সঙ্গে তার এক পারে অত্যন্ত