পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

স্তূপটাকে উত্তরকালের হাতে দিয়ে যায়, সেই কাল সেটার গ্রন্থি শিথিল করতে লেগে যায় নয়তো নিজের চলতি ইচ্ছের সঙ্গে সেই স্থাবর ইচ্ছেটার মিল করবার জন্যে নানাপ্রকার কসরৎ করতে থাকে। বস্তুত মানুষের বাস করা উচিত সেই তাঁবুতে যে তাঁবুর ভিৎ মাটিকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে না এবং পাথরের দেয়াল উঁচিয়ে মুক্ত আকাশকে মুষ্টিঘাত করতে থাকে না। আমাদের দেহটাই যে আল্‌গা বাসা, আমাদের যাযাবর আত্মার উপযোগী, ত্যাগ করবার সময় এলে সেটাকে কাঁধে ক’রে নিয়ে যেতে হয় না। এইজন্যেই আমি তোমাকে অনেকবার পরামর্শ দিয়েছি ইঁটকাঠের বাঁধন দিয়ে অচল ডাঙার উপরে বাড়ি তৈরি কোরো না—স্রোতের উপর সচল বাসার ব্যবস্থা কোরো—যখন স্থির থাক্‌তে চাও একটা নোঙর নামিয়ে দিলেই চলবে—আবার যখন চলতে চাও তখন নোঙরটা টেনে তোলা খুব বেশি কঠিন হবে না। আমাদের কালস্রোতে-ভাসা জীবনের সঙ্গে বাসাগুলোর সামঞ্জস্য থাকে না ব’লেই টানাহেঁচড়ায় পদে পদে দুঃখ পেতে হয়। আমাদের বাসাগুলোর মধ্যে দুটো তত্ত্বই থাকা চাই স্থাবর এবং জঙ্গম। থাক্‌বার বেলা থাক্‌তে হবে ফেল্‌বার বেলা ফেলতে হবে আত্মার সঙ্গে দেহের সম্বন্ধের মতো। এ সম্বন্ধ সুন্দর কারণ এটা ধ্রুব নয়। সেইজন্য নিয়তই দেহের সঙ্গে দেহীর বোঝাপড়া করতে হয়। সাধনার অন্ত নেই। এর বেদনা এর আনন্দ সমস্তই অধ্রুবতার স্রোত থেকেই আবর্ত্তিত হয়ে উঠছে—এর সৌন্দর্য্যও সকরুণ, তার উপরে মৃত্যুর ছায়া। কালের এবং ভাবের, পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই এর পরিবর্ত্তন চলেইছে।—

 সংসারে আমাদের সব বাসাই এমনি হওয়াই ভালো।

 আমার ধ্যান যে রূপকে আশ্রয় করেছে পরের হাতে নিজেকে বেচবার জন্যে সে যেন সেজেগুজে লোভনীয় হয়ে বসে না থাকে, নিজেকে সম্পূর্ণ ক’রে তারপরে অন্যকালের অন্য লোকের তপস্যাকে