পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬০
বিচিত্র প্রবন্ধ
২৬ ফাল্গুন, ১৩৩৫

 চলেছি, নতুন নতুন মেয়েপুরুষের সঙ্গে আলাপ চলেছে। আলাপ জম্‌তে না জম্‌তে আবার ঘাটে ঘাটে মানুষ বদল হচ্চে। অর্থাৎ দিনের পর দিন যাদের নিয়ে সময় কাট্‌ছে তারা যেন এমন জীব যাদের ভিতরটা নেই কেবল উটা আছে—যা ধাঁ করে চোখে পড়ে; মনের উপর ছায়া ফেলে সেইটুকু মাত্র। কেদারার পিঠে তাদের নামের ফলক ঝুল্‌ছে, আর তারা কেদারার উপর পা ছড়িয়ে বসে আছে, তারা আর কোথাও নেই কেবল ঐটুকুর উপরে। আমার সঙ্গে কেবল তিন জন মাত্র মানুষ আছে যারা জায়গা ওদের চেয়ে বেশি জোড়ে না, কিন্তু যারা অনেকখানি,—যাদের সত্যতা, দৃশ্য অদৃশ্য বহু সাক্ষ্যের দ্বারা আমার মনের মধ্যে চারদিক থেকে প্রমাণীকৃত—এই জন্যে যাদের কাছ থেকে অনেক খানি পাই এবং যারা সরে গেলে অনেকখানি হারাই—যারা তাসের উপরকার ছবির মত একতলবর্ত্তী নয়—যাদের মধ্যে পূর্ণায়তন জগতের পরিচয়। পূর্ণায়তন জগতেই বাস্তবতার স্বাদ পাওয়া আমাদের অভ্যাস তার চেয়ে কম পড়লে দুধের বদলে এক বাটি ফেনা খাবার চেষ্টা করার মতো হয়। যতটা চুমুক দিলে আমার জানার পূরো স্বাদ পাই এই জাহাজভরা যাত্রীদের মধ্যে তা পাবার জো নেই। এই কারণে আমাদের পেট ভরে জানার অভ্যাস পীড়িত হচ্ছে। কিছুদিনের উপবাসে ক্ষতি হয় না। কিন্তু বেশিদিন এমন অত্যল্প জানার খোরাকে চলে না। আত্মীয়ের মধ্যে আমাদের জানার ভরপুর খোরাক মেলে ব’লেই তাতে আমরা এত আরাম পাই। কেন এই কথাটা এমন জোরে মনে এল সেই কথাটা খুলে বলি। আজ বিকেলে সিঙ্গাপুরের ঘাটে জাহাজ থাম্‌তেই সরযূ জাহাজে এসে উপস্থিত। আমি তাঁকে গতবারে অল্প কয়দিনমাত্র দেখেছিলুম, সুতরাং তাঁকে সুপরিচিত বল্‌লে বেশি বলা হবে।