পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬২
বিচিত্র প্রবন্ধ

আসনে নানা আকারের খোঁদল তৈরী করে, তার মধ্যে যখন সে বসে তখন সে ব’সে যায়—তারপরে যখন সেটাকে ছাড়তে হয় তখন আর ভালো লাগে না। এ জাহাজে আমার তেমনি ঘটেছে। এই ক্যাবিনে এক পাশে একটি লেখবার ডেস্ক, আর একপাশে বিছানা, তা ছাড়া আয়নাওয়ালা দেরাজ আর কাপড় ঝোলাবার আলমারী—এর সংলগ্ন একটি নাবার ঘর এবং সেটা পেরিয়ে গিয়ে আর একটা ক্যাবিন—সেখানে আমার বাক্স তোরঙ্গ প্রভৃতি। এরই মধ্যে মন নিজের আসবাব গুছিয়ে নিয়েছে। অল্প জায়গা ব’লেই আশ্রয়টি বেশ নিবিড়—প্রয়োজনের জিনিষ সমস্ত হাতের কাছে। এখান থেকে নেমে দুদিনের জন্য সাংহাইয়ে ‘সু’র বাড়িতে ছিলাম, ভালো লাগেনি, অত্যন্ত ক্লান্ত করেছিল-তার প্রধান কারণ নূতন জায়গায় মন তার গায়ের মাপ পায়নি—চারিদিকে এখানে ঠেকে ওখানে ঠেকে—আর তার উপরে দিনরাত আদর অভ্যর্থনা গোলমাল। প্রতিদিনের ভাবনা কল্পনার মধ্যেই নতুনত্ব আছে—বাইরের নতুনত্ব তাকে বাধা দিতে থাকে। জীবনে আমরা যে-কোনো পদার্থকে গভীর ক’রে পেয়েছি অর্থাৎ অনেকদিন ধ’রে অনেক ক’রে জেনেছি সত্যিকার নতুন তারি মধ্যে, তাকে ছেড়ে নতুনকে খুঁজতে হয় না। অন্য সব মূল্যবান জিনিষেরই মতো নতুনকে সাধনা ক’রে লাভ করতে হয়। অর্থাৎ পুরানো ক’রে তবে তাকে পাওয়া যায়। হঠাৎ যাকে পেয়েছি ব’লে মনে হয়, সে ফাঁকি—দুদিন বাদেই তার যথার্থ জীর্ণতা ধরা পড়ে। আজকের দিনে এই সস্তা নতুনত্বের মৃগয়ায় মানুষ মেতেছে—সেইজন্যেই মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে তার বদল চাই—তার এই বদলের নেশায় বিজ্ঞান তার সহায়তা করছে—সে সময় পাচ্চে না গভীরের মধ্যে তলিয়ে গিয়ে চিরনূতনের পরিচয় পেতে। এই জন্যেই চারিদিকে একটা পুঁথি-পড়া ইতরতা ব্যাপ্ত হয়ে পড়ছে। ধ্রুবসত্যকে সত্যরূপে পাবার সময় নেই, সময় নেই। সাহিত্যে যে অশ্লীলতা দেখা,