পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬৪
বিচিত্র প্রবন্ধ

ট্র্যাম হু হু ক’রে চলে গেল কিন্তু তার পিছনে মস্ত একটা ট্রাম কোম্পানি,—সমুদ্রের এপারে ওপারে তার হিসেব চালাচালি। মানুষটা ছাতা বগলে নিয়ে চলেছে, মোটর গাড়ি তার সর্ব্বাঙ্গে কাদা ছিটিয়ে চলে গেল—তার সব কথাটা যদি চোখে পড়ত তাহোলে দেখতুম বৃহৎ কাণ্ড—সুখে দুঃখে বিজড়িত একটা বিপুল ইতিহাস। কিন্তু সমস্তই আমাদের চোখে হাল্‌কা হয়ে ঘটনা প্রবাহ আকারে দেখা দিচ্চে। অনেক মানুষ আছে যারা এই জান্‌লার ধারে বসে যা দেখে তাতে এক রকমের আনন্দ পায়। যারা ভালো চিঠি লেখে তারা মনের জানলার ধারে ব’সে লেখে—আলাপ ক’রে যায় তার কোনো ভার নেই, বেগও নেই, স্রোত আছে। এই সব চল্‌তি ঘটনার পরে লেখকের বিশেষ অনুরাগ থাকা চাই, তাহোলেই তার কথাগুলি পতঙ্গের মতো হাল্‌কা পাখা মেলে হাওয়ার উপর দিয়ে নেচে যায়। অত্যন্ত সহজ বলেই জিনিষটি সহজ নয়-ছাগলের পক্ষে একটুও সহজ নয় ফুলের থেকে মধু সংগ্রহকরা। ভারহীন সহজের রসই হচ্ছে চিঠির রস। সেই রস পাওয়া এবং দেওয়া অল্প লোকের শক্তিতেই আছে। কথা বলবার বিষয় নেই অথচ কথা বলবার রস আছে এমন ক্ষমতা ক’জন লোকের দেখা যায়? জলের স্রোত কেবল আপন গতির সংঘাতেই ধ্বনি জাগিয়ে তোলে, তার সেই সংঘাতের উপকরণ অতি সামান্য, তার নুড়ি, বালি, তার তটের বাঁকচোর, কিন্তু আসল জিনিষটা হচ্ছে তার ধারার চাঞ্চল্য। তেমনি যে-মানুষের মধ্যে প্রাণস্রোতের বেগ আছে সে মানুষ হাসে আলাপ করে, সে তার প্রাণের সহজ কল্লোল, চারিদিকের যে-কোনো-কিছুতেই তার মনটা একটু মাত্র ঠেকে তাতেই তার ধ্বনি ওঠে। এই অতিমাত্র অর্থভারহীন ধ্বনিতে মন খুসি হয়—গাছের মর্ম্মর ধ্বনির মতো প্রাণ-আন্দোলনের এই সহজ কলরব।

 অল্প বয়সে আমি চিঠি লিখতুম যা-তা নিয়ে। মনের সেই হাল্‌কা