পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৮৩

প্রথম কাজ আরম্ভ করেছিলেন তখন সেই কাজের মধ্যে অনেক খানিই ছিল অভাবনীয়, কর্ত্তব্যের সীমা তখন সুনির্দ্দিষ্ট হয়ে কঠিন হয়ে ওঠেনি, আমার ইচ্ছা আমার আশা আমার সাধনা তার মধ্যে আমার সৃষ্টির ভূমিকাকে অপ্রত্যাশিতের দিকে প্রসারিত ক’রে রেখেছিল—সেই ছিল আমার নবীনের লীলাভূমি—কাজে খেলায় প্রভেদ ছিল না। প্রবীণ এল বাইরে থেকে, এখানে কেজো লোকের কারখানা ঘরের ছক কেটে দিলে, কর্ত্তব্যের রূপ সুনির্দ্দিষ্ট ক’রে দিলে, এখন সেইটের আদর্শকে নিয়ে ঢালাই পেটাই করা হলো প্রোগ্রাম—হাপরের হাঁপানি শব্দ উঠছে, আর দমাদম চলছে হাতুড়ি পেটা। যথানির্দ্দিষ্টের শাসন আইনে কানুনে পাক। হলো, এখানে অভাবনীয়কেই অবিশ্বাস ক’রে ঠেকিয়ে রাখা হয়। যে পথিকটা একদিন শিলাইদহ থেকে এখানকার প্রান্তরে শালবীথিছায়ায় আসিন বিছিয়ে বসেছিল তাকে সরতে সরতে কতদুরে চলে যেতে হয়েছে তার আর উদ্দেশ মেলে না—সেই মানুষটার সমস্ত জায়গা জুড়ে বসেছে অত্যন্ত পাকা গাথুনির কাজ। মাঝখানে প’ড়ে শুকিয়ে এল কবির যৌবন, বৈশাখে অজয় নদীর মতো। নইলে আমি শেষদিন পর্য্যন্তই বলতে পারতুম আমার পাবে না চুল, মরব না বুড়ো হয়ে। জিৎ হোলো কেজো লোকের। এখন যে কর্ম্মের পত্তন তার পরিমাপ চলে, তার সীমানা সুস্পষ্ট, অন্য বাজারের সঙ্গে তার বাজারদর খতিয়ে দেবার হিসাব মিলবে পাকা খাতায়। মন বলছে, “নিজ বাসভূমে পরবাসী হোলে।” এর মধ্যে যেটুকু ফাঁকা আছে সে ঐ সামনে যেখানে রক্তকরবী ফোটে, সেদিকে তাকাই আর ভুলে যাই যে, পাঁচজনে মিলে আমাকে কারখানাঘরের মালিকগিরিতে চেপে বসিয়ে দিয়ে গেছে।