পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সরােজিনী প্রয়াণ
১৩

পড়িতেছে।—স্রোত ফিরানো যাক্। এসো এবার গঙ্গার স্রোতে এসো।

 সত্য ঘটনায় ও উপন্যাসে প্রভেদ আছে, তাহার সাক্ষ্য দেখো, আমাদের জাহাজ বয়ায় ঠেকিল তবু ডুবিল না-পরম বীরত্ব সহকারে কাহাকেও উদ্ধার করিতে হইল না—প্রথম পরিচ্ছেদে জলে ডুবিয়া মরিয়া ষড়বিংশ পরিচ্ছেদে কেহ ডাঙায় বাঁচিয়া উঠিল না। না ডুবিয়া সুখী হইয়াছি সন্দেহ নাই, কিন্তু লিখিয়া সুখ হইতেছে না; পাঠকেরা নিশ্চয়ই অত্যন্ত নিরাশ হইবেন, কিন্তু আমি যে ডুবি নাই সে আমার দোষ নয়, নিতান্তই অদৃষ্টের কারখানা।

 মরিলাম না বটে কিন্তু যমরাজের মহিষের কাছ হইতে একটা রীতিমতো ঢুঁ খাইয়া ফিরিলাম। সুতরাং সেই ঝাঁকানির কথাটা স্মরণফলকে খোদিত হইয়া রহিল। খানিকক্ষণ অবাক্‌ ভাবে পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করা গেল-সকলেরই মুখে একভাব, সকলেই বাক্যব্যয় করা নিতান্ত বাহুল্য জ্ঞান করিলেন। বৌঠাকরুণ বৃহৎ একটা চৌকির মধ্যে কেমন একরকম হইয়া বসিয়া রহিলেন। তাঁহার দুইটি ক্ষুদ্র আনুষঙ্গিক আমার দুই পার্শ্ব জড়াইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। দাদা কিয়ৎক্ষণ ঘন ঘন গোঁফে তা’ দিয়া কিছুই সিদ্ধান্ত করিতে পারিলেন না। কর্ত্তা বাবু রুষ্ট হইয়া বলিলেন, “সমস্তই মাঝির দোষ,” মাঝি কহিল, তাহার অধীনে যে ব্যক্তি হাল ধরিয়াছিল তাহার দোষ। সে কহিল, হালের দোয়। হাল কিছু না বলিয়া অধোবদনে সটান জলে ডুবিয়া রহিল-গঙ্গা দ্বিধা হইয়া তাহার লজ্জা রক্ষা করিলেন।

 এই খানেই নোঙর ফেলা হইল। যাত্রীদের উৎসাহ দেখিতে দেখিতে হ্রাস হইয়া গেল—সকাল বেলায় যেমনতরো মুখেব ভাব, কল্পনার এঞ্জিন-গঞ্জন গতি ও আওয়াজের উৎকর্ষ দেখা গিয়াছিল, বিকালে ঠিক তেমনটি দেখা গেল না। আমাদের উৎসাহ নোঙরের সঙ্গে সঙ্গে সাত