পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪২
বিচিত্র প্রবন্ধ

কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। মা বলিলেন; “রোস্‌ বাছা, খেলাটা আগে শেষ কর!”

 আমি কহিলাম, “না মা, খেলা তুমি কাল শেষ কোরো, আজ দিদিমাকে গল্প বল্‌তে বলো না!”

 মা কাগজ ফেলিয়া দিয়া কহিলেন, “যাও খুড়ি! উহার সঙ্গে এখন কে পারিবে!” মনে মনে হয়তো ভাবিলেন—আমার তো কাল মাষ্টার আসিবে না, আমি কালও খেলিতে পারি।

 আমি দিদিমার হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া একেবারে মশারির মধ্যে বিছানার উপরে গিয়া উঠিলাম। প্রথমে খানিকটা পাশ-বালিশ জড়াইয়া পা ছুঁড়িয়া নড়িয়াচড়িয়া মনের আনন্দ সম্বরণ করিতে গেল—তার পরে বলিলাম—গল্প বলো।

 তখনো ঝুপ্‌ঝুপ্‌ করিয়া বাহিরে বৃষ্টি পড়িতেছিল—দিদিমা মৃদুস্বরে আরম্ভ করিলেন—এক যে ছিল রাজা।

 তাহার এক রাণী। আঃ, বাঁচা গেল। সুয়ো এবং দুয়ো রাণী শুনিলেই বুকটা কাঁপিয়া উঠে—বুঝিতে পারি দুয়ো হতভাগিনীর বিপদের আর বড়ো বিলম্ব নাই। পূর্ব্ব হইতে মনে বিষম একটা উৎকণ্ঠা চাপিয়া থাকে।

 যখন শোনা গেল আর কোনো চিন্তার বিষয় নাই, কেবল রাজার পুত্র-সন্তান হয় নাই বলিয়া রাজা ব্যাকুল হইয়া আছে এবং দেবতার নিকট প্রার্থনা করিয়া কঠিন তপস্যা করিবার জন্য বনগমনে উদ্যত হইয়াছে, তখন হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম। পুত্রসন্তান না হইলে যে, দুঃখের কোন কারণ আছে তাহা আমি বুঝিতাম না। আমি জানিতাম যদি কিছুর জন্যে বনে যাইবার কখনো আবশ্যক হয় সে কেবল মাষ্টারের কাছ ইতে পালাইবার অভিপ্রায়ে।

 রাণী এবং একটি বালিকা-কন্যা ঘরে ফেলিয়া রাজা তপস্যা করিতে