পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

হিসাবে—তাহা হাটের জিনিষ—তাহাকে রাজকীয় উৎসবের উচ্চ আসন দেওয়া যাইতে পারে না।

 কিন্তু শ্রাব্যকাব্যের চেয়ে দৃশ্যকাব্য স্বভাবতই কতকটা পরাধীন বটে। বাহিরের সাহায্যেই নিজেকে সার্থক করিবার জন্য সে বিশেষভাবে সৃষ্ট। সে যে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে, এ কথা তাহাকে স্বীকার করিতেই হয়।

 আমরা এ কথা স্বীকার করি না। সাধ্বী স্ত্রী যেমন স্বামীকে ছাড়া আর কাহাকেও চায় না, ভালো কাব্য তেম্‌নি ভাবুক্‌ ছাড়া আর কাহারো অপেক্ষা করে না। সাহিত্য পাঠ করিবার সময় আমরা সকলেই মনে মনে অভিনয় করিয়া থাকি—সে অভিনয়ে যে কাব্যের সৌন্দর্য্য খোলে না সে কাব্য কোনো কবিকে যশস্বী করে নাই।

 বরঞ্চ এ কথা বলিতে পারো যে, অভিনয়বিদ্যা নিতান্ত পরাশ্রিতা। সে অনাথা নাটকের জন্য পথ চাহিয়া বসিয়া থাকে। নাটকের গৌরব অবলম্বন করিয়াই সে আপনার গৌরব দেখাইতে পারে।

 স্ত্রৈণ স্বামী যেমন লোকের কাছে উপহাস পায়, নাটক তেম্‌নি যদি অভিনয়ের অপেক্ষা করিয়া আপনাকে নানাদিকে খর্ব্ব করে, তবে সে-ও সেইরূপ উপহাসের যোগ্য হইয়া উঠে। নাটকের ভাবখানা এইরূপ হওয়া উচিত যে,—“আমার যদি অভিনয় হয় তো হউক্, না হয় তো অভিনয়ের পোড়াকপাল আমার কোনোই ক্ষতি নাই।”

 যাহাই হউক, অভিনয়কে কাব্যের অধীনতা স্বীকার করিতেই হয়। কিন্তু তাই বলিয়া সকল কলাবিদ্যারই গোলামি তাহাকে করিতে হইবে, এমন কী কথা আছে! যদি সে আপনার গৌরব রাখিতে চায়, তবে যেটুকু অধীনতা তাহার আত্মপ্রকাশের জন্য নিতান্তই না হইলে নয়, সেইটুকুই সে যেন গ্রহণ করে;–তাহার বেশি যাহা কিছু অবলম্বন করে, তাহাতে তাহার নিজের অবমাননা হয়।