বার্মিংহামের বিশপ বার্নিজ তাঁর গ্রন্থে ক্রীড সম্বন্ধে অনেক তীক্ষ্ণ ও অপ্রিয় কথা লিখেছেন। এঁরা প্রতিষ্ঠাশালী লোক, নয়তো চার্চ অভ ইংলাণ্ডের কর্তারা এঁদের পদচ্যুত করতেন। খ্রীষ্টধর্মের প্রতি সাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনবার জন্য আজকাল বিলাতে প্রবল চেষ্টা হচ্ছে এবং অর্থব্যয়ও প্রচুর হচ্ছে। কিন্তু ফল বিশেষ কিছু দেখা যাচ্ছে না।
গত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বৎসরের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বরূপ দুটি রাজনীতিক ধর্মের উদ্ভব হয়েছে কমিউনিজম ও নাৎসিবাদ। এই দুই ধর্মে দেবতার প্রয়োজন নেই, ক্রীডই সর্বস্ব। মধ্যযুগের ধর্মান্ধ খ্রীষ্টান ও মুসলমানের সঙ্গে অনেক কমিউনিস্ট ও নাৎসির সাদৃশ্য দেখা যায়। নাৎসিবাদ এখন মৃতপ্রায়, কিন্তু কমিউনিজম অন্য সকল ধর্মকে কালক্রমে গ্রাস করবে এমন সম্ভাবনা আছে। প্রতিকারের জন্য নিষ্ঠাবান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টাণ্ট সম্প্রদায় উঠে পড়ে লেগেছেন।
পাশ্চাত্ত্য দেশ বৈজ্ঞানিক ও যান্ত্রিক সভ্যতার শীর্ষে অবস্থিত। আমাদের তুলনায় ব্রিটিশ প্রভৃতি উন্নত জাতির অন্ধ সংস্কার অত্যন্ত অল্প। তথাপি ধর্মের মার্গবিচারে পাশ্চাত্ত্য বুদ্ধি এখনও বাধামুক্ত হয় নি। বিজ্ঞানের সঙ্গে সাধারণ ভারতবাসীর পরিচয় নগণ্য, আমাদের যান্ত্রিক ঐশ্বর্য অতি অল্প, অন্ধ সংস্কারেরও অন্ত নেই। কিন্তু ভারতের ধর্মবুদ্ধি নিগড়বদ্ধ নয়। এদেশের শাস্ত্রগ্রন্থসমূহে যে নৈতিক দার্শনিক ও পারমার্থিক তত্ত্ব আছে তাতে বৈচিত্রের অভাব নেই, প্রত্যেক হিন্দু নিজের রুচি অনুসারে ধর্মমত গঠন করতে পারে। কোনও চার্চ বা সংঘ তার উপর চাপ দিয়ে বলে না—দশ অবতার তোমাকে মানতেই হবে, গায়ত্রী জপতেই হবে, শিবরাত্রিতে উপবাস করতেই হবে, নতুবা তোমার হিন্দুত্ব বজায় থাকবে না।