পাতা:বিজ্ঞান দর্পণ (প্রথম খণ্ড, ১২৮৯).pdf/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কার্ত্তিক ১২৮৯।]
রহস্য।
২১৭

রহস্য।

(পূর্ব্ব প্রকাশিতের পর।)

 চিৎপাত হইয়া বিছানায় শুইয়া পড়িলাম। এই শীতকালে কুল্ কুল্ করিয়া ঘাম হইতে লাগিল। একে ঘর অন্ধকার, আবার সমস্ত খড় খড়ি বন্ধ, যেন নিশ্বাস বন্ধ হইবার উপক্রম হইল। মারা যাই আর কি, থাকিতে পারিলাম না; খড় খড়ি খুলিব মনে করিয়া উঠিলাম। অন্ধকারে দেয়াল ধরিয়া আস্তে আস্তে যাইতে লাগিলাম; পর্দ্দায় হাত ঠেকিল, মনে করিলাম এই খানে জানালা আাছে; উঁ হুঁ, এ যে ছোট বিছানার মশারি। আাবার হাত বাড়াইয়া অগ্রসর হইলাম, দুই তিনবার চৌকিতে পা লাগিয়া “পপাত ধরণীতলে” হইবার উপক্রম হইল। একটা কিসের শব্দ হইল, ঠাওরাইয়া মনে করিলাম অন্ধকারে টিপ্‌কলে পা পড়াতে কলে জলের শব্দ হইতেছে। এইবার জানালা পাইয়াছি। পর্দ্দা সরাইয়া যেমন জানালা খুলিতে যাইব “বাবারে এ এ মাগো ও ও হি ই ই ই গেছি ই ই ই” লাফাইয়া যেমন পলাইব একখানি চৌকিতে পা লাগিয়া পড়িয়া গেলাম। এই শীতকালের রাত্রিতে বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা জল শ্রাবণের ধারার ন্যায় মস্তকে বর্ষণ হইয়াছে। জানালা মনে করিয়া সাওয়ার বাথের ভিতর ঢুকিয়াছিলাম। কাঁপিতে কাঁপিতে পোর্টমেণ্টো খুঁজিয়া আর একটী ইজের পরিলাম। লেপ মুড়ি দিয়া পুনরায় শয়ন করিলাম।

 বিছানায় শুইলাম বটে কিন্তু অন্ধকারে প্রাণ যেন আইঢাই করিতে লাগিল। ঠিক্ যেন যমযন্ত্রণা হইল। হঠাৎ মনে হইল আমি কি বোকা, অন্ধকারে এত কষ্ট পাইবার আগে যদি গ্যাস জ্বালিতাম। আর গ্যাস জ্বালিতে কষ্ট নাই, হাতোলটা টিপিলেই হইবে।

 পুনরায় উঠিয়া খুঁজিয়া খুঁজিযা হাতোলটি টিপিলাম। কই গ্যাস জ্বলিল না? ও আবার কি? এতরাত্রে ঘণ্টা বাজে কেন? ঐ যা, গ্যাশ জ্বালিতে এলার্ম ঘণ্টা বাজাইয়া দিয়াছি। সর্ব্বনাশ করিয়াছি, ছাদের উপর ভয়ানক শব্দ করিয়া ঘণ্টা বাজিতেছে; এখনি পাড়ার লোক ছুটিয়া আসিবে। কি করি, শব্দ থামাইবার উপায় জানি না। দৌড়িয়া হার্বির ঘরে যাই। এ ভিন্ন আর উপায় নাই; নল দিয়া কথা কহা, সেকাজ এ প্রাণ থাকিতে হইবে না। তাড়াতাড়ি যেমন যাইব, একটী টেবিলের উপর নানাবিধ খেলানা সাজান ছিল, ধাক্কা লাগিয়া সমস্ত হুড়মুড় করিয়া উল্টাইয়া পড়িল। এমম সময় হার্বি আসিয়া পড়িল।

 হার্বি।—কি হইয়াছে, ব্যাপার কি?