পাতা:বিদায় ভোজ - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদায় ভোজ।

 অর্দ্ধ ঘণ্টার মধ্যেই রামবাগানে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। সুশীলের বাড়ীখানি দ্বিতল ও নিতান্ত ক্ষুদ্র নয়। বাড়ীর দরজায় গাড়ীখানি স্থির হইলে আমরা উভয়েই অবতরণ করিলাম। পরে কোচমানকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিতে বলিয়া সুশীলের সহিত ভিতরে প্রবেশ করিলাম।

 ইতিপূর্ব্বে আমি অনেকবার সুশীলের বাড়ী গিয়াছিলাম। সুশীলের মাতাঠাকুরাণী আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করেন। সুতরাং অন্দরে প্রবেশ করিতে আমার কিছুমাত্র লজ্জা বোধ হইল না।

 সুশীল আমাকে লইয়া একেবারে তাহার মাতাঠাকুরাণীর গৃহে প্রবেশ করিল। সুশীলের মাতা তখন সেই ঘরেই ছিলেন, আমাকে দেখিবামাত্র এক দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আসিয়াছ বাবা! বড়ই বিপদে পড়িয়াছি—তুমি বিপদের কাণ্ডারী।”

 আমিও দুঃখিতভাবে বলিলাম, “আজ্ঞে আমি সুশীলের মুখে সকল কথাই শুনিয়াছি। কিন্তু যখন সকলেই আপনাদের আত্মীয়, তখন আংটীটা বোধ হয় কোথাও পড়িয়া গিয়া থাকিবে।”

 সুশীলের মাতাঠাকুরাণী বলিলেন, “আমরা সকলেই ত তন্নতন্ন করিয়া খুঁজিয়াছি, কিন্তু কই, আংটীত পাওয়া গেল না।”

 আ। কি রকম আংটী?

 সুশীল নিকটেই ছিল। সে বলিল, “দেখিতে তেমন দামী বলিয়া বোধ হয় না। তবে আংটীর উপরে একটী ক্ষুদ্র ঘড়ী আছে। ঘড়ীটা এত ছোট যে, দেখিয়া সহজে সময় স্থির করা যায় না। দূরবীণ দিয়া না দেখিলে ঘড়ীর দাগগুলি জানিতে পারা যায় না। ঘড়ীর দুই পার্শ্বে দুইখানি বড় বড় হীরক আছে। হীরক দুইখানির দাম অনেক বলিয়া বোধ হইল।”