পাতা:বিদ্যাপতি ঠাকুরের পদাবলী - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه/وك কতদূর সাদৃশ্ব ও পার্থক্য ছিল, সে কথার বিচার বা আলোচনা না করিয়াও স্বীকার করিতে হইবে যে, চণ্ডীদাস বিদ্যাপতির সমসাময়িক কবি, কিন্তু দুইজনের ভাষায় কোন সাদৃশু নাই। বীরভূম ও মিথিলায় যত ব্যবধান, কলিকাতা ও চট্টগ্রামের পরস্পর দুরত্ব তাছার অপেক্ষা অধিক কিন্তু উভয় স্থানের লিখিত ভাষায় বড় প্রভেদ নাই। যাহাকে ব্রজভাষা ও ব্রজবুলি বলা যায়, তাছাও ঠিক কোন দেশের ভাষা নয়, পুঁথির ও গানের ভাষা। বঙ্গদেশে বিস্তর বৈষ্ণবকবি সেই ভাষার লালিত্যে, শ্রতিমাধুর্য্যে, তরলতায় ও মধুময়ী মোহিনীতে মুগ্ধ হইয় তাহার অনুকরণে ভূরি ভূরি পদ রচনা করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু ঐ ভাষা দুৰ্ব্বোধ ; চৈতন্যদেবের পূৰ্ব্বে এদেশে বিদ্যাপতির গীতাবলীর বহুল প্রচার ছিল না, সেইজন্ত বৈষ্ণবদাস বলিয়া গিয়াছেন, ‘আছিল গোপতে, যতন করি পন্থ মোর (চৈতন্যদেব ) জগতে করল পরকাশ ।” সেকালে বিদ্যাপতির ভাষা বৈষ্ণব ভাবুক ও কবিদিগের নিকট তেমন দুরূহ ছিল না । বৈষ্ণবধৰ্ম্মপ্রচারের পর সাম্প্রদায়িকতার কারণে পদাবলীর চর্চা সঙ্কীর্ণ চষ্টয়া পড়িল। সম্প্রদায় যত বড়ই হউক, জাতির অপেক্ষ ছোট । বৈষ্ণব যাক ভক্তিপূর্বক পড়ে, শাক্ত হয় ত তাহাতে উদাসীন। ক্রমে লোকে বিদ্যাপতির ভাষা ভুলিল, পদাবলী দিন দিন দুৰ্ব্বোধ হইয়া উঠিল। দ্বিতীয় কারণ, লিপিকরের উৎপাত। বগীর দৌরাত্ম্য দেশের লোককে ছাড়িয়া দেশের পুথিকে আক্রমণ করিয়াছিল। কোন শাসন নাষ্ট, কোন নিয়ম নাই, যাহার যেমন ইচ্ছা, সে তেমন লিখে । জ, ন, শ, ইকার, উকার কখন যে কোন আকার ধারণ করে, তাকার কিছুই স্থিরতা নাই। পরাধীন জাতি এষ্ট এক পথি লিখিবার সময় মনের সাধ মিটাষ্টয়া স্বাধীনতা প্রকাশ করিয়া লইল । এখন, পুথি নকল করা ও ছাপান অক্ষরে বট তৈয়ারি করায় অনেক তফাৎ। মুদ্রণযন্ধে যে অক্ষর সাজায়, সে পাণ্ডুলিপির অক্ষরই দেখে, শব্দের BB BB BB BS BBB BB BBBB BBBB BBS BBBS BB BBBB BBB BB BB BBS অপর লোকে বারবার তাছা সংশোধন করিয়া দেয়। কিন্তু যে পুথি লিখে, পুথিগত বিদ্যার তাহার একটু অভিমান থাকে। নকল করিবার সময় শব্দ পাঠ করিয়া লিপে, কেবল একএকটি অক্ষর দেখিয়া লিথে না। কোন কথা না বুঝতে পারিলে কিবা কোন শব্দ তাঙ্গর বিবেচনায় অসঙ্গত বোধ হটলে আর একটি শব্দ বসাইয়া দেওয়া তাহার পক্ষে বিচিত্র নহে । অথচ সে যাই লিখিবে, তাহা সংশোধন করিবার কোন উপায় নাই। ছাপা অক্ষরের প্রফ দশবার কাটিয়া দেওয়া যায়, কিন্তু হস্তলিখিত পুথিতে হস্তক্ষেপ করিয়া পাঠপরিবর্তনরূপ মহাপাতকের ভাগী কে ইষ্টবে ? বিদ্যাপতির পদাবলী একে গীত, তাহার উপর লিপিকরের গুণপন পরিবর্তন যে অনেক ঘটিয়াছে, তাহ সহজেই অনুমান করিতে পারা যায়। পাঠপরিবর্ধনে পদগুলি অত্যন্ত জটিল ও গুৰ্ব্বোধ হুষ্টয়া উঠিয়াছে, অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন পাঠ মিলাইয়াও সঘর্থ করা যায় না । স্বতন্ত্র সঙ্কলন প্রথম প্রকাশিত হইবার পর বিদ্যাপতির পদাবলীর আরও অনেকগুলি সটীক সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছে। তাছাতে অর্থবোধের কিছু আমুকুল্য হইয়াছে, কিন্তু এখনও বহুতর ভ্রম রহিয়াছে। সে কথা পরে বলিতেছি । রাজকৃষ্ণবাবুর প্রথম ও প্রধান সিদ্ধান্ত এই যে, মৈথিলভাষায় রচিত বিদ্যাপতির অনেক গীত মিথিলায় প্রচলিত আছে এবং তাছাদের ভণিতা এদেশে প্রচলিত ভণিতার অনুরূপ। উদাহরণস্বরূপ তিনি একটি গীতের পাঠান্তর ও একটি নূতন গীত উদ্ভূত করেন। পরবর্তী সঙ্কলনকারদিগের পক্ষে ষ্টছ একটি বিশেষ সংবাদ। নূতন পদ্ধ এরূপ আর কত অাছে এবং এদেশে প্রচলিত কতগুলি পদের পাঠান্তর