পাতা:বিদ্যাসাগরচরিত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিদ্যাসাগর

উপকারে লাগিত সেখানে তাহার করুণ কিরূপ সবেগে অগ্রসর হইত, ‘গ্রাষ্ট্ৰীট’এর সর্বপ্রকার প্রলোভন হইতে তিনি কিরূপ পুরুষোচিত আত্মসম্মানের সহিত আপন সন্ত্রম রক্ষা করিয়াছিলেন, সে-সব কথার পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নাই। কিন্তু বোধ করি, এ-সকল গুণের একান্ত দুর্লভতা সম্বন্ধে মনোযোগ আকর্ষণ করা ভালো। বোধ হয় অনেকেই আপন পিতাকে ভালোবাসে সৌভাগ্যক্রমে তাহা সত্য; কিন্তু ক'টা লোক আছে যাহার পিতৃভক্তি খ্যাপামি-অপবাদের আশঙ্কা অতিক্রম করিতে পারে। কয়জন আছেন যাহারা বহুদিনগত এক অবাধ্যতা- অপরাধের প্রায়শ্চিত্তসাধনের জন্য যুটমিটারের হাটে পিতার মৃত্যুর বহু বৎসর পরেও যাত্রা করিতে পারেন। সমাজত্যক্তা রমণী পথপ্রান্তে নিরাশ্রয়ভাবে পড়িয়া আছে দেখিলে আমাদের অনেকেরই মনে ক্ষণিক দয়ার আবেশ হয়। আমরা হয়তো পুলিসকে ডাকি কিম্বা ঠিকাগাড়িতে চড়াইয়া দিয়া তাহাকে সরকারি দরিদ্রাশ্রমে পাঠাই, অথবা বড়োজোর সরকারি দরিদ্রপালন ব্যবস্থার অসম্পূর্ণতার বিরুদ্ধে টাইমস-পত্রে প্রবন্ধ লিবিয়া পাঠাই। কিন্তু এ প্রশ্ন বোধ করি জিজ্ঞাসা না করাই ভালো যে, কয়জন সাধু আছেন যাহারা তাহাকে কাধে করিয়া নিজের বাড়িতে লইয়া যাইতে পারেন এবং তাহার অভাব-সকল মোচন করিয়া দিয়া তাহার জীবনযাত্রার সুব্যবস্থা করিয়া দেন। অনেক বড়োললাকের জীবনে আমরা সাধুভাব ও সদাচার দেখিতে পাই, কিন্তু ভালো লোকের মধ্যেও এমন আদর্শ সচরাচর দেখিতে পাওয়া যায় না, যাহার জীবন প্রচলিত লোকাচারের দ্বারা গঠিত নহে, অথবা যাহার হৃদয়বৃত্তি চিরাভ্যস্ত শিষ্ট- প্রথার বাঁধা খাল উদবেল করিয়া উঠিতে পারে। জসনের চরিত্রের প্রতি আমাদের যে প্রীতি জন্মে তাহার প্রধান কারণ, তাহার জীবন যে

৬৩