পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরকারী কর্ম্ম হইতে অবসরগ্রহণ
৭৩
সত্য, তবুও আমার অবশিষ্ট জীবন এই মহৎ এবং পবিত্র কর্ম্মের অনুষ্ঠানেই ব্যয়িত হইবে। এবিষয়ে আমার গভীর ও আন্তরিক অনুরাগ কেবল আমার জীবনের সহিত অবসানলাভ করিতে পারে।
“এরূপ গুরুতর পন্থা অবলম্বন করিবার গৌণ হেতুগুলির মধ্যে দুইটি এই, ভবিষ্যৎ উন্নতির আর কোনো আশা নাই; এবং কর্তব্যপরায়ণ বিভাগীয় কর্ম্মচারিগণের পক্ষে যে-সহানুভূতি বাঞ্ছনীয়, বর্ত্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থার সহিত আমার সেই ব্যক্তিগত সহানুভুতির অভাব।
“প্রথম কারণটি সম্পর্কে কথা এই,—বর্ত্তমান পদের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ অল্প শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে সময়ের সদ্ব্যবহার করিতে পারিব। অস্বীকার করিতে পারি না, যে-ব্যক্তি এতদিন পর্য্যন্ত আপন পরিবারবর্গের ভবিষ্যৎ গ্রাসাচ্ছাদনের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থাই করিয়া উঠতে পারে নাই, তাহার পক্ষে এরূপ ভাবা অন্যায় নহে। এই পরিশ্রমিসাধ্য গুরুকর্ত্তব্যের সশ্রব হইতে বিচ্ছিন্ন হইতে বিলম্ব করিলে ভগ্নস্বাস্থ্যবশে সেরূপ সংস্থান করাও আর চলিবে না।
“দ্বিতীয় কারণ সম্বন্ধে আমার বক্তব্য,—আমি মনে করি সরকারের স্কন্ধে আমার মতামত চাপাইবার অধিকার নাই। তবুও, কর্ম্মের সহিত আমার হৃদয়ের যোগ নাই—যাঁহাদের চাকরি করি তাঁহাদের নিকট হইতে এ সত্য গোপন করিতে চাই না। এ কারণে আমার কর্ম্মকুশলতার অবশ্য হানি হইবে। বিবেকবুদ্ধিপরায়ণ সহকারী কর্ম্মচারীর পক্ষে সদুদ্দেশ্য-প্রণোদিত হইয়া কাজ করা এক প্রধান গুণ। এইরূপ সদুদ্দেশ্যেরে বশবর্ত্তী হইয়া ইহা অপেক্ষা অল্পও বলিতে পারি না—অধিক বলিতে ইচ্ছুক নই।”
“আমার ক্ষুদ্রশক্তি অনুযায়ী যতদূর সম্ভব উৎসাহসহকারে কর্ত্তব্যপালন করিয়াছি, এই তৃপ্তি হৃদয়ে লইয়া আমি অবসর গ্রহণ করিতেছি।