পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কর্ম্মাটাঁড়ে একটি ই. আই. আর. লাইনের এই ষ্টেশন হইয়াছে। উহা জামতাড়া ও মধুপুর ষ্টেশনের মধ্যে। ১৮৭৮ সালে ষ্টেশনের পাশে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এক বাংলা ছিল। বাংলাটিতে দুটি হল, চারটি ঘর ও দুটি বারাণ্ডা ছিল; বাংলার চারিদিকে একটি চারচৌরশ জমি, চার-পাঁচ বিঘা হইবে,—সেইটি বাগান; বাগানটিতে বিদ্যাসাগর মহাশয় নানা দেশ হইতে আঁবের কলম আনিয়া পুঁতিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে কয়েকটি লতানে আঁব গাছ ছিল; বিদ্যাসাগর মহাশয় গাছগুলির বিশেষ যত্ন করিতেন। বাগানে আরও নানা রকমের গাছ ছিল। বাগানের বাহিরে গোটাকতক সেকেলে অশ্বত্থগাছ ছিল। তখনকার স্টেশন মাষ্টার মহাশয় ওখানকার সর্ব্বময় কর্ত্তা ছিলেন—I am the monarch of all I survey—বিদ্যাসাগর মহাশয় কর্ম্মাটাঁড়ে যাওয়ায় তাঁহার আধিপত্যের একটু ক্ষতি হইয়াছিল, তাই তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে সুনজরে দেখিতেন না। বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রথম প্রথম তাঁহার সহিত সদ্ভাব রাখিয়া চলিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন; কিন্তু যখন দেখিলেন কিছু হইল না, তখন তিনি নন্‌-কোঅপারেশন করিয়া বসিলেন।

 আমি ঐ বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্ণৌ যাই। এখানে আমার সর্ব্বদা ম্যালেরিয়া জ্বর হইত; সেইজন্য লক্ষ্ণৌ ক্যানিং কলেজের সংস্কৃত প্রফেসারের একটনি করিতে গিয়াছিলাম। কিন্তু যাইবার আট দশ দিন পূর্ব্বে আমার ভয়ানক জ্বর হয়, তখন আমি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে লিখি— আমি একটানা লক্ষ্ণৌ যাইতে পারিব না, আপনার ওখানে একদিন থাকিয়া যাইব। ঠিক দিনে পৌঁছিবার আশায় আমি পথ্য করিয়াই যাত্রা করি; আমার সঙ্গে আমার গ্রামের মহেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়ের একটি ছেলে ছিল; তাহারও ম্যালেরিয়া জ্বর, তাই তাহার বাপ আমার সঙ্গে তাহাকে পাঠাইয়া দিলেন।