পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীন কর্ম্মক্ষেত্রে
৯৯
“হা অবলাগণ! তোমরা কি পাপে, ভারতবর্ষে আসিয়া, জন্ম গ্রহণ কর, বলিতে পারি না!”

 যাঁহারা বাল্যকালে বিদ্যাসাগরের ‘সীতার বনবাস’ পাঠ করিয়াছেন তাঁহারা কখনও ইহার ভাষার লালিত্য ও মাধুর্য্য বিস্মৃত হইতে পারিবেন না। নিম্ন-উদ্ধৃত অংশের মত সীতার বনবাসের বহু স্থলই তাঁহাদের স্মৃতিপথে জাগরিত থাকিবে।—

“সীতা অন্য দিকে অঙ্গুলিনির্দ্দেশ করিয়া বলিলেন, নাথ, দেখুন দেখুন, এ দিকে আমাদের দক্ষিণারণ্যপ্রবেশ কেমন সুন্দর চিত্রিত হইয়াছে। আমার স্মরণ হইতেছে, এই স্থানে আমি সূর্য্যের প্রচণ্ড উত্তাপে নিতান্ত ক্লান্ত হইলে, আপনি, হস্তস্থিত তালবৃন্তু আমার মস্তকের উপর ধরিয়া, আতপনিবারণ করিয়াছিলেন। রাম বলিলেন, প্রিয়ে, এই সেই সকল গিরিতরঙ্গিণীতীরবর্তী তপোবন; গৃহস্থগণ, বানপ্রস্থধর্ম্ম অবলম্বনপুর্ব্বক, সেই সেই তপোবনের তরুতলে বিশ্রামসুখসেবায় সময়াতিপাত করিতেছেন। লক্ষ্মণ বলিলেন, আর্য্য, এই সেই জনস্থানমধ্যবর্তী প্রস্রবণগিরি। এই গিরির শিখরদেশ, আকাশপথে সতত সঞ্চরমান জলধরমণ্ডলীর যোগে নিরন্তর নিবিড় নীলিমায় অলঙ্কৃত; অধিত্যকা প্রদেশ ঘন সন্নিবিষ্ট বিবিধ বনপাদসমূহে আচ্ছন্ন থাকাতে, সতত স্নিগ্ধ, শীতল, ও রমণীয়; পাদদেশে প্রসন্নসলিলা গোদাবরী, তরঙ্গবিস্তার করিয়া, প্রবল বেগে গমন করিতেছে। রাম বলিলেন, প্রিয়ে, তোমার স্মরণ হয়, এই স্থানে কেমন মনের সুখে, ছিলাম। আমরা কুটীরে থাকিতাম; লক্ষ্মণ, ইতস্ততঃ পর্য্যটন করিয়া আহারোপযোগী ফল মূল প্রভৃতির আহরণ করিতেন; গোদাবরীতীরে মৃদু মন্দ গমনে ভ্রমণ করিয়া, আমরা, প্রাহ্ণে ও অপরাহ্ণে, শীতল সুগন্ধ গন্ধবহের সেবন করিতাম। হায়! তেমন অবস্থায় থাকিয়াও, কেমন সুখে সময় অতিবাহিত হইয়াছিল!”