পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চারিত্রিক বিশেষত্ব

 বিদ্যাসাগরকে বুঝিতে হইলে তাঁহাকে এক দিক দিয়া দেখিলে চলিবে না। ‘দয়ার সাগর’ বিদ্যাসাগরের করুণার কথা সকলেই জানেন। ওলাউঠা রোগে মুমূর্ষু রোগী পথে পড়িয়া আছে, বিদ্যাসাগর তাহাকে কোলে করিয়া ঘরে আনিয়াছেন, অপরিচিতের দুঃখে অভিভূত হইয়া তৎক্ষণাৎ তাহাকে আশাতীত সাহায্য করিয়াছেন, বহু অনাথা বিধবার প্রতিপালনে এবং অসংখ্য দরিদ্র ছাত্রের বই কাপড় ও মাহিনা জোগাইতে মাসে মাসে অকাতরে অর্থব্যয় করিয়াছেন,—এইরূপ বহু কথা সকল জীবনীকারই লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এই সকল কাহিনী হইতে ঈশ্বরচন্দ্রের প্রাণ সে কত বড় তাহা জানিতে পারি। ফরাসী দেশ হইতে কাতরভাবে সাহায্য প্রার্থনা করিয়া কবি মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরের নিকট যে পত্র প্রেরণ করেন তাহাতে বলিতেছেন,—“যাঁহার নিকট আমার প্রার্থনা জ্ঞাপন করিতেছি, প্রাচীন ঋষির জ্ঞান ও প্রতিভা, ইংরেজের কর্মশক্তি, এবং বাঙালী মায়ের হৃদয় দিয়া তাঁহার ব্যক্তিত্ব গঠিত।”[১] সত্যই বিদ্যাসাগরের হৃদয় বাঙালী জননীর মতই কোমল ছিল। তাই তিনি কাহারও কষ্ট কাহারও ব্যথা দেখিতে পারিতেন না, তখনই তাহা দূর করিবার চেষ্টা করিতেন। তাই বিধবার অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণার প্রতিকারকল্পে তিনি নিজের সকল শক্তি সকল জ্ঞান প্রয়োগ করিয়াছিলেন। করুণ এবং উদারহৃদয় জনহিতৈষী ও সমাজসংস্কারক রূপে ঈশ্বরচন্দ্র সকলের নিকটই সুপরিচিত। এই দিক দিয়া বিদ্যাসাগরের


  1. “The man to whom I have appealed has the genius and wisdom of an ancient sage, the energy of an Englishman, and the heart of a Bengali mother.”