পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নেতা। এককে তিনি প্রাচীন সংস্কৃতশাস্ত্রে সূক্ষ্মবিচারশীল পণ্ডিত; অপর দিকে তিনি বঙ্গ ভাষায় সম্পূর্ণ আধুনিক ধরণের শিক্ষাপদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পূর্ণ ভারতীয় কাশ্মীর দ্বারা পরিচালিত উচ্চশ্রেণীর ইংরেজী বিদ্যালয়ের স্রষ্টা। একদিকে তিনি যেমন মানবহিতৈষী সহৃদয় সমাজ-সংস্কারক, অন্যদিকে তেমনি অগ্রগণ্য শিক্ষারথী,—ঐ দ্বি-ধারায় প্রবাহিত আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির অগ্রদূত। সরকারী দপ্তরখানায় আবিষ্কৃত অপ্রকাশিত চিঠিত্রের সাহায্যে, শিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগরের অতুলনীয় কার্য্যাবলীর যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহার আলোচনায় শুধু আমাদের কৌতূহল নিবৃত্ত হইবে না, জ্ঞানবৃদ্ধিরও সহায়তা করিবে।

 মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮২০)। অল্প বয়স হইতেই তাঁহার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। বংশগত প্রথামত তাঁহার পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বালক ঈশ্বরচন্দ্রকে প্রথমে সংস্কৃত-সাহিত্য শিখাইতে মনস্থ করেন। নয় বৎসর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্রকে কলিকাতার গভর্ন্মেণ্ট সংস্কৃত কলেজে ভর্ত্তি করিয়া দেওয়া হয় (১ জুন, ১৮২৯)। প্রায় সাড়ে বার বৎসর কলেজে অধ্যয়নের ফলে তিনি ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, গণিত, ন্যায়, দর্শন ও ধর্ম্মশাস্ত্রে অনন্যসাধারণ ব্যুৎপত্তিলাভ করেন। তাঁহার সমগ্র ছাত্রজীবন অপূর্ব কৃতিত্বে সমুজ্জ্বল। একুশ বৎসর বয়সে পাঠ সমাপন করিয়া তিনি কলেজ হইতে বাহির হইলেন। অসাধারণ মেধা ও পাণ্ডিত্যের মর্য্যাদা-স্বরূপ অধ্যাপকবর্গ তাঁহাকে “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে বিভূষিত করিলেন (ডিসেম্বর, ১৮৫১)।

 সংস্কৃত কলেজ হইতে বাহির হইয়া সৌভাগ্যক্রমে শিক্ষা বিভাগেই বিদ্যাসাগরের চাকরি জুটিল। ১৮৪১ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মধুসূদন তর্কালঙ্কারের মৃত্যু হইলে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের