পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংস্কৃত-শিক্ষার সংস্কার

 ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠা হইতে সংস্কৃত কলেজ অবৈতনিক বিদ্যালয় ছিল। ফলে দাঁড়াইয়াছিল এই, ছাত্রের বিনা প্রতিবন্ধে কলেজে প্রবেশলাভ করিতে পারিত এবং পরে সুবিধা পাইলেই অন্য ইংরেজী বিদ্যালয়ে চলিয়া যাইত। এমনও হইত, ভর্ত্তি হইয়া নাম লিখাইয়া ছেলের আর দেখা নাই, তারপর দীর্ঘ অনুপস্থিতির ফলে যখন হাজিরা খাতা হইতে নাম কাটা গেল, তখন ছাত্র অথবা ছাত্রের অভিভাবক এমন করিয়া আসিয়া কর্ত্তৃপক্ষকে ধরিয়া পড়িল যে, নিবেদন অগ্রাহ্য করা দুরূহ। এইসব অসুবিধা দূর করিবার জন্য বিদ্যাসাগর ১৮৫২ সালের আগষ্ট মাসে প্রথমে দুই টাকা প্রবেশ-দক্ষিণার ব্যবস্থা প্রবর্তন করিলেন। পুনঃপ্রবেশের জন্যও ঐ ব্যবস্থা বাহাল হইল। তারপর ১৮৫৪, জুন মাসের মাঝামাঝি মাসিক এক টাকা বেতনের বন্দোবস্ত হইল। ইহাতে অব্যবস্থিতচিত্ত ছাত্রদের কিঞ্চিৎ চৈতন্যোদয় হইল, বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতির হারও যথেষ্ট বাড়িয়া গেল।

 ১৮৫১ সালের নভেম্বর মাসে সংস্কৃত কলেজে এক উন্নত প্রণালীর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্ত্তিত হইল। ব্যাকরণ-বিভাগ সম্পূর্ণরূপে পুনর্গঠিত হইল। পূর্ব্বে বোপদেবের ‘মুগ্ধবোধ’ ছিল ব্যাকরণের একমাত্র পাঠ্যপুস্তক। সংস্কৃত শিক্ষার গোড়াতেই সংস্কৃতে লেখা এই দুরূহ ব্যাকরণখানি ছেলেদের পড়িতে হইত। এখানি আয়ত্ত করিতে লাগিত—চার-পাঁচ বৎসর; তাও ছেলেরা অর্থ না বুঝিয়াই মুখস্থ করিত। কাজেই সংস্কৃত-সাহিত্য পড়িবার সময় এই মুখস্থ বিদ্যা বিশেষ কাজে লাগিত না; দেখা যাইত, ভাষায় তাহারা আশানুরূপ অধিকার লাভ করে নাই। বিদ্যাসাগর ছেলেদের বাধাটুকু বুঝিতে পারিলেন। তিনি দেখিলেন, বাঙালী ছাত্রকে সংস্কৃত শিখাইতে হইলে বাংলায় ব্যাকরণ পড়াইতে হইবে। তিনি ‘মুগ্ধবোধ’ পড়ানো বন্ধ করিলেন এবং তাহার পরিবর্ত্তে বাংলায় লেখা স্বরচিত ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ ও