পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ

নিষ্প্রয়োজন। বেদান্ত ও সাংখ্য যে ভ্রান্ত দর্শন, এ-সন্ধে এখন আর মতদ্বৈধ নাই। মিথ্যা হইলেও হিন্দুদের কাছে এই দুই দর্শন অসাধারণ শ্রদ্ধার জিনিষ। সংস্কৃতে যখন এগুলি শিখাইতেই হইবে, ইহাদের প্রভাব কাটাইয়া তুলিতে প্রতিষেধকরূপে ইংরেজীতে ছাত্রদের যথার্থ দর্শন পড়ানো দরকার। বার্কলের Inquiry বেদান্ত বা সাংখ্যের মত একই সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইয়াছে; ইউরোপেও এখন আর ইহা খাঁটি দর্শন বলিয়া বিবেচিত হয় না, কাজেই ইহাতে কোনক্রমেই সে কাজ চলিবে না। তা ছাড়া হিন্দু শিক্ষার্থীরা যখন দেখিবে বেদান্ত ও সাংখ্য-দর্শনের মত একজন ইউরোপীয় দার্শনিকের মতের অনুরূপ, তখন এই দুই দর্শনের প্রতি, তাহাদের শ্রদ্ধা কমা দূরে থাকুক, বরং আরও বাড়িয়া যাইবে। এই অবস্থায় বিশপ বার্কলের গ্রন্থ পাঠ্যপুস্তকরূপে প্রচলন করিতে আমি ডাঃ ব্যালাণ্টাইনের সহিত একমত নহি।

“সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত ও ইংরেজী উভয় প্রকারের পাঠ পদ্ধতিই যে ভাল, একথা ডাঃ ব্যালাণ্টাইন স্বীকার করিয়াছেন। অথচ উভয়বিধ পাঠের ফলে ‘সত্য দ্বিবিধ’—এই ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাত্রদের মনে জন্মিতে পারে, এ ভয় করিয়াছেন। তিনি বলিতেছেন,—‘এ ভয় অলীক নয়। সংস্কৃত-শাস্ত্রে পণ্ডিত অথচ ইংরেজীতেও অভিজ্ঞ আমি এমন-সব ব্রাহ্মণকে জানি যাঁহারা পাশ্চাত্য লজিক ও সংস্কৃত ন্যায়,—এই উভয় শাস্ত্রের মত ঠিক বলিয়া মনে করেন, কিন্তু উভয়ের মূল তত্ত্বের ঐক্য সম্বন্ধে কোনো ধারণা তাঁহাদের নাই এবং সেজন্য এক ভাষায় অন্যটির চিন্তাপদ্ধতি প্রকাশ করিতে অক্ষম। আমার বিশ্বাস যে-লোক সংস্কৃত ও ইংরেজী—এই উভয় ভাষার বিজ্ঞান ও সাহিত্য বুদ্ধিমানের মত পাঠ করিয়াছে—বুঝিতে চেষ্টা করিয়াছে—তাহার সম্বন্ধে এইরূপ ভয় করিবার কোনো কারণ নাই। যে যথার্থরূপে ধারণা করিয়াছে, তাহার