পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলা-শিক্ষা প্রচলনে বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টা

 তখনকার কালে দেশবাসীর শিক্ষার দিকে ভারত-সরকারের বিশেষ লক্ষ্য ছিল না। সংস্কৃত ও আর্ব্বীর জন্য সরকার কিছু টাকা ব্যয় করিতেন মাত্র। ১৮৩৫, মার্চ্চ মাসে গভর্ণর-জেনারেল বেণ্টিঙ্ক মিনিটে লিখিলেন,— “ভারতবাসী জনসাধারণের মধ্যে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও বিজ্ঞানের প্রচারই বৃটিশ-রাজের মহৎ উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এবং শিক্ষা-বাবদ সকল মঞ্জুরী অর্থ শুধু ইংরেজী-শিক্ষার জন্য ব্যয় করিলেই ভাল হয়।” এই গুরুতর সিদ্ধান্তের দিন হইতে গভর্ন্মেণ্ট ইংরেজী ভাষার মধ্য দিয়াই শিক্ষা-ব্যবস্থায় উৎসাহ দান করিতে লাগিলেন। বেণ্টিঙ্কের নব ব্যবস্থায় উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষাসম্পর্কিত অভাবই দূর হইতে পারে। সেই হেতু শিক্ষা-বিষয়ে সাধারণের দাবি বিশেষভাবে উপস্থাপিত হইতে লাগিল। কিন্তু ইংরেজী কিংবা সংস্কৃত ভাষার ভিতর দিয়া ত আর দেশের লোককে শিক্ষিত করিয়া তুলিতে পারা যায় না;—মাতৃভাষার মধ্য দিয়াই জনসাধারণ জ্ঞানলাভ করে। এই দিক দিয়া প্রথম প্রচেষ্টার সম্মান স্যার হেনরী হার্ডিঞ্জের প্রাপ্য। দেশীয় ভাষার ভিতর দিয়া প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের জন্য, আর্থিক অসচ্ছলতার অসুবিধাসত্ত্বেও, তিনি বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার নানাস্থানে (মাসিক ১৮৬৫৲ টাকা ব্যয়ে) ১০১টি পল্লী-পাঠশালা স্থাপনের ব্যবস্থা করেন (অক্টোবর, ১৮৪৪)।[১] বিদ্যাসাগর এই কার্য্যে

  1. ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলে ভারতে শিক্ষা-বিস্তারের ইতিহাস,—Selections from Educational Records, Part I (1781-1839) by H. Sharp, and Part II (1840-1859) by J. A. Richey এবং পুস্তকের শেষে প্রমাণপঞ্জী দ্রষ্টব্য।