পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা

অনেকবিধ জন্তু সংগ্রহ করিয়াছিলেন; এবং প্রতিবেশী ব্যক্তিবর্গকে, এই সকল জন্তুর কিরূপ অবস্থা, ইহার এ রূপে নির্ম্মিত হইল কেন, ইহাদের সৃষ্টির তাৎপর্য্যই বা কি, এইরূপ বহুবিধ প্রশ্ন দ্বারা সর্ব্বদাই বিরক্ত করিতেন। কিন্তু এই সকল প্রশ্নের যে উত্তর পাইতেন, তাহা যে সন্তোষজনক হইত না, তাহা বলা বাহুল্যমাত্র। সামান্য বুদ্ধি লোকেরা সামান্য বস্তুকে সামান্য জ্ঞানই করিয়া থাকে। কিন্তু অসামান্য বুদ্ধিসম্পন্নেরা কোনও বস্তুকেই সামান্য জ্ঞান করেন না। এই নিমিত্ত, সর্বদা এরূপ ঘটিয়া থাকে যে, প্রাকৃত লোকেরা, মহানুভাবদিগের বুদ্ধির প্রথম ধার্য্য সকল দেখিয়া, উন্মাদ জ্ঞান করে।

 এক দিবস, ডুবাল কোনও পল্লীগ্রামস্থ বালকের হস্তে ঈসপরিচিত গল্পের পুস্তক অবলোকন করিলেন। ঐ পুস্তক পশু পক্ষী, সৰ্প প্রভৃতি নানাবিধ জন্তুর প্রতিমূর্ত্তিতে অলঙ্কৃত ছিল। এ পর্য্যন্ত, ডুবালের বর্ণপরিচয় হয় নাই, সুতরাং পুস্তকে কি লিখিত ছিল তাহার বিন্দুবিসর্গও অনুধাবন করিতে পারিলেন না। যে সকল জন্তু দেখিলেন, উহাদের নাম জানিতে, ও তত্তদ্বিষয়ে ঈসপ কি লিখিয়াছেন তাহা শুনিতে অত্যন্ত কৌতুহলাক্রান্ত ও ব্যগ্রচিত্ত হইয়া, আপনি সমক্ষে সেই পুস্তক পাঠ করিবার নিমিত্ত, স্বীয় সহচরকে অত্যন্ত অনুরোধ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সেই বালক কোনও ক্রমেই তাঁহার বাসনা পূর্ণ করিল। না। ফলতঃ, তাহাকে সর্ব্বদাই এই রূপে কৌতুহলাক্রান্ত ও পরিশেষে একান্ত বিষাদ প্রাপ্ত হইতে হইত।

 এই রূপে যৎপরোনাস্তি ক্ষোভ প্রাপ্ত হইয়া, তিনি এতাদৃশ ক্ষুন্ন অবস্থায় থাকিয়াও, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, যত কষ্টসাধ্য হউক না কেন, যে রূপে পারি, লেখা পড়া শিখিব। এইরূপ অধ্যবসায়ারূঢ় হইয়া, তিনি, যে কিছু অর্থ তাঁহার হস্তে আসিতে লাগিল, প্রাণপণে তাহা সঞ্চয় করিতে লাগিলেন; এবং তাহা দিয়া সন্তুষ্ট করিয়া, বয়োধিক বালকদিগের নিকট বিদ্যাশিক্ষা আরম্ভ করিলেন।

 ডুবাল, কিছু দিনের মধ্যেই, অদ্ভুত পরিশ্রম দ্বারা আপন অভিপ্রেত একপ্রকার সিদ্ধ করিয়া, ঘটনাক্রমে এক দিবস একখানি পঞ্জিকা অবলোকন করিলেন। ঐ পঞ্জিকাতে জ্যোতিশচক্রের দ্বাদশ রাশি চিত্রিত ছিল। তিনি তদ্দর্শনে অনায়াসেই স্থির করিলেন যে, এই সমুদায় আকাশমণ্ডলস্থিত পদার্থবিশেষের প্রতিমূর্ত্তি হইবেক, সন্দেহ নাই। অনন্তর, তিনি, তৎসমুদায় প্রত্যক্ষ করিবার নিমিত্ত, এক দৃষ্টিতে নভোমণ্ডল নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন, এবং সেই সমুদায় দেখিলাম বলিয়া যাবৎ তাহার অন্তঃকরণে দৃঢ় প্রত্যয় না জন্মিল, তাবৎ কোনও মতেই নিবৃত্ত হইলেন না।