পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনচরিত—নিকলাস কোপনিকস ১২৭ এই অদ্ভূত আখ্যানের শেষ ভাগ, যে রূপে উপসংহৃত হইলে, সকলের মনোরঞ্জন হইত, সেরূপ হয় নাই। বোধ হয়, কোনও লোকহিতৈষী সমাজের সাহায্যে জেঙ্কিন্সের স্বদেশে প্রতিপ্রেরিত হওয়াই উচিত ছিল। তাহা হইলে তিনি তথায় পৈতৃক প্রজাগণের সভ্যতাসম্পাদন ও তাহাদিগকে শিক্ষাপ্রদান করিতে পারিতেন । কিয়ৎ কাল অতীত হইল, প্রতিবেশবাসী কোনও সদাশয় ব্যক্তি, সদভিপ্রায়প্রণোদিত হইয়া, ঔপনিবেশিক দাসমণ্ডলীর উপযুক্ত ধৰ্ম্মোপদেষ্ট বলিয়া, জেঙ্কিন্সকে খুষ্টধৰ্ম্মসঞ্চারিণী সভার নিকট বলিয়া দেন। উক্ত সভার অধ্যক্ষের জেঙ্কিন্সকে সম্মত করিয়া উপদেশকতার ভার দিয়া, মরিশস দ্বীপে প্রেরণ করিয়াছেন । কিন্তু এই নিয়োগ তাহার পক্ষে কোনও রূপেই উপযুক্ত হয় নাই । নিকলাস কোপনিকস পূৰ্ব্ব কালে কাল্ডিয়া, ইজিপ্ট, গ্রাস, ভারতবর্ষ প্রভৃতি নানা জনপদে জ্যোতিবিদ্যার বিলক্ষণ অনুশীলন ছিল ; কিন্তু খৃষ্টীয় শাকের যোড়শ শতাব্দীর পূৰ্ব্বে, জ্যোতির্মণ্ডলীর বিষয় বিশুদ্ধ রূপে বিদিত হয় নাই। পূৰ্ব্বকালীন পণ্ডিতগণের এই স্থির সিদ্ধান্ত ছিল, পৃথিবী স্থির ও অন্তরীক্ষবিক্ষিপ্ত জ্যোতিষ্কসমুদায়ের মধ্যস্থিত ; চন্দ্র, শুক্র, মঙ্গল, সূৰ্য্য, অন্যান্য গ্ৰহগণ ও নক্ষত্রমণ্ডল তাহার চতুদিকে এক এক মণ্ডলাকার পথে পরিভ্রমণ করে ; তাহাদের দূরত্ব ও বেগের বিভিন্নতা প্রযুক্ত, দিবসে ও রজনীতে নভোমণ্ডলের বিচিত্র আকার দেখিতে পাওয়া যায়। এই মত বহু কাল পর্য্যন্ত প্রবল ও প্রচলিত ছিল । খৃষ্টীয়শাকপ্রারম্ভের ছয় শত বৎসর পূৰ্ব্বে, এনাকুসিমেণ্ডর, পিথাগোরস প্রভৃতি গ্ৰীসদেশীয় পণ্ডিতগণের মনে অনতিপরিস্ফুট রূপে এই উদয় হইয়াছিল যে, সূৰ্য্য আচল পদার্থ ; পৃথিবী একটি গ্রহ, অন্যান্য গ্রহবৎ যথানিয়মে সূর্য্যের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে। তাহার সাহস পূর্বক আপনাদের এই বিশুদ্ধ মত প্রচার করিয়াছিলেন ; কিন্তু তৎকালপ্রচলিত ধৰ্ম্মশাস্ত্রের সহিত সম্পূর্ণ বিসংবাদিত প্রযুক্ত, সৰ্ব্বসাধারণ লোকে যৎপরোনাস্তি বিদ্বেষ প্রদর্শন করাতে, বদ্ধমূল করিতে পারেন নাই ।