পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনচরিত--গালিলিয় ১৩৩ ১৬১১ খৃঃ অব্দে, যখন তিনি এই সকল বিষয়ের গবেষণাতে প্রবৃত্ত হন, তৎকালে টস্কানির অধীশ্বরের অনুরোধপরতন্ত্র হইয়া, পিসাপ্রত্যাগমন পুৰ্ব্বক, সমধিক বেতনে গণিতাধ্যাপকের পদ পুনগ্রহণ করেন ; সুতরাং তাহার উদ্ভাবিত বিষয় সকল ঐ নগরে প্রথম প্রচারিত হইল। কোপনিকস কেবল দৈবগত্যা যে সকল নিগ্রহ অতিক্রম করিয়া গিয়াছিলেন, এক্ষণে গালিলিয়কে তৎসমুদায় বিলক্ষণ রূপে ভোগ করিতে হইল। তৎকালে তিনি এক গ্রন্থ প্রচার করেন ; তাহাতে স্পষ্ট লিখিয়াছিলেন, আমি যাহা যাহ উদ্ভাবিত করিয়াছি, তদ্বারা কোপনিকসের প্রদর্শিত প্রণালীর যথার্থত সপ্রমাণ হইয়াছে। ইহাতে এই ঘটিল যে, যাজকের তাহার নামে ধৰ্ম্মবিপ্লাবক বলিয়া অভিযোগ উপস্থিত করাতে, ১৬১৫ খৃঃ অব্দে, তাহাকে রোমনগরীয় ধৰ্ম্মসভার (৮) সম্মুখে উপস্থিত হইতে হইল । সভাধ্যক্ষেরা তাহাকে এই প্রতিজ্ঞাশূঙ্খলে বদ্ধ করিলেন, আর আমি এরূপ সত্তঘাতক মত কদাচ মুখে আনিব না। ইহাও নির্দিষ্ট আছে, কিন্তু সত্যাসত্যের নিশ্চয় নাই, সভাধ্যক্ষের এই উপলক্ষে তাহাকে পাচ মাস কারাবদ্ধ করিয়াছিলেন ; আর, টস্কানির অধীশ্বর এ বিষয়ে হস্তীর্পণ না করিলে, তাহাকে আরও গুরুতর নিগ্ৰহ ভোগ করিতে হইত । গালিলিয় ধৰ্ম্মসভার আগ্রে যেরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে কয়েক বৎসর পৰ্য্যন্ত ক্ষান্ত হইয়া রহিলেন ; কিন্তু জ্যোতিবিদ্যার যে যথার্থ মত অবলম্বন করিয়াছিলেন, তাহার অনুশীলনে বিরত হইলেন না। পরিশেষে, তিনি কোপনিকসের প্রদশিত প্রণালীর সবিস্তর বিবরণ ভূমণ্ডলে প্রচার করিবার নিমিত্ত নিতান্ত উৎসুক হইলেন ; কিন্তু কুসংস্কারাবিষ্ট বিপক্ষবর্গের বিদ্বেষভয়ে স্পষ্ট রূপে আত্মমত ব্যক্ত না করিয়া, কৌশল করিয়া, তিন জনের কথোপকথনাত্মক এক গ্রন্থ লিখিলেন । তাহাতে প্রথম ব্যক্তি কোপনিকসের মত রক্ষা করিতেছে-; দ্বিতীয় ব্যক্তি টলেমি ও অরিষ্টটলের ; তৃতীয় ব্যক্তি উভয়পক্ষপ্রদশিত যুক্তি ও তর্কের এ রূপে বলাবল বিবেচনা করিতেছে যে, উপস্থিত বিষয় আপাততঃ অনির্ণয়াত্মক বোধ হয়। কিন্তু অভিনিবেশ পূৰ্ব্বক বিবেচনা করিয়া দেখিলে, কোপনিকসের পক্ষে প্রদর্শিত যুক্তির প্রবলতাবিষয়ে ভ্রান্তি হইবার বিষয় নাই । (৮) ধৰ্ম্মবিদ্বেষী নাস্তিকদেব পরীক্ষা ও দণ্ডবিধানার্থক সভা । খৃষ্টধৰ্ম্মাবলম্বীদের এক সম্প্রদায় আছে, উহার নাম রোমান কাথলিক । ইয়ুরোপের অন্তঃপাতী যে সকল দেশ এই সম্প্রদায়ের মতানুযায়ী, তন্মধ্যে কোনও কোনও দেশে খৃষ্টীয় শাকের দ্বাদশ শতাব্দীতে এই ধৰ্ম্মাধিকরণ স্থাপিত হয় । ইহা স্থাপন করিবার উদ্দেশ্য এই যে, যাহারা বায়বলের বিরুদ্ধ মত অবলঙ্গন অথবা প্রচার করিবেক এই ধৰ্ম্মাধিকরণে তাহদের পরীক্ষা ও দণ্ডবিধান হইবেক । তাহা হইলেই বায়বলবিদ্বেষী নাস্তিকদের উচ্ছেদ হইয়া খাইবেক ।