পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনচরিত—গালিলিয় ১৩৫ মনোমধ্যে ঘৃণারোষসহকৃত যৎপরোনাস্তি অনুতাপ উপস্থিত হওয়াতে, তিনি পৃথিবীতে পদাঘাত করিয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, ইহা এখনও চলিতেছে । বিচারকত্তার, গালিলিয়ের নাস্তিক্যবুদ্ধির পুনঃসঞ্চার দেখিয়া, এই উৎকট দণ্ড বিধান করিলেন, তোমাকে যাবজ্জীবন কারাগারে থাকিতে হইবেক এবং তিন বৎসর প্রতিসপ্তাহে অনুতাপসূচক সপ্ত স্তুতি পাঠ করিতে হইবেক । তাহার গ্রন্থ এক বারেই প্রতিষিদ্ধ ও র্তাহীর মত একান্ত অশ্রদ্ধিত হইল । এই রূপে গালিলিয়ের প্রতি কারাগারাধিবাসের আদেশ হইলে, কোনও কোনও বিচারকত্তার বিবেচনা করিলেন, তিনি যেরূপ বৃদ্ধ হইয়াছেন, তাহাতে কোনও ক্রমেই এরূপ কঠিন দণ্ড সহ করিতে পারিবেন না। অতএব তাহার, অনুকম্পাপ্রদর্শন পূর্বক, তাহাকে নির্বাসিত করিয়া, ফ্লোরেন্সসন্নিহিত কোন ও নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিতি করিতে অজ্ঞাপ্রদান করিলেন । এই রূপে কারানিরুদ্ধ হইয়া, তিনি পদার্থবিদ্যার অনুশীলন দ্বারা কালহরণ করিতে লাগিলেন । গালিলিয় তৎকালে নেত্ররোগে অত্যন্ত অভিভূত হইয়াছিলেন ; একটি চক্ষু এক বারে নষ্ট হইয়া যায়, দ্বিতীয়ও প্রায় অকৰ্ম্মণ্য হয় ; তথাপি, ১৬৩৭ খৃঃ অব্দে, চন্দ্রের তুলামান প্রকাশ করেন । শেষ দশায় তিনি অন্ধতা, বধিরত, নিদ্রার অভাব ও সৰ্ব্বাঙ্গব্যাপিনী বেদনাতে অত্যন্ত অভিভূত ও বিকল হইয়াছিলেন ; কিন্তু তাহার মন তৎকাল পৰ্য্যন্ত অনলস ও কৰ্ম্মণ্য ছিল । তিনি, ১৬৩৮ খৃঃ অব্দে, স্বয়ং লিখিয়াছেন, আমি অন্ধদশাতে এক বার বিশ্বরচনাসংক্রান্ত এক বিষয় অনুধ্যান করি, আর বার আর বিষয় ; আর যত যত্ন করি, কোনও রূপেই অস্থির চিত্তকে স্থির করিতে পারি না ; এই সাৰ্ব্বক্ষণিক চিত্তব্যাসঙ্গ দ্বারা আমার এক বারে নিদ্রার উচ্ছেদ হইয়াছে । এই অবস্থাতে, ক্রমশঃ ক্ষয়কারী জ্বররোগে আক্রান্ত হইয়া, গালিলিয়, অষ্টসপ্ততি বৎসর বয়ঃক্রম কালে, ১৬৪২ খৃঃ অব্দের জানুয়ারি মাসে, প্রাণত্যাগ করিলেন। তাহার কলেবর ফ্লোরেন্সনগরের এক দেবালয়ে সমাহিত হইল। কিয়ৎ কাল পরে, তাহাকে চিরস্মরণীয় করা উচিত বিবেচনা করিয়া, তত্ৰত্য লোকেরা, ১৭৩৭ খৃঃ অব্দে, উক্ত স্থানে এক পরমশোভন কীৰ্ত্তিস্তম্ভ নির্মাণ করিয়াছেন ।