পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনচরিত—সর আইজাক নিউটন ১৩৭ নিউটন পরিশ্রম, প্রজ্ঞা, মুশীলতা ও অহমিকাশূন্ত আচরণ দ্বারা আইজাক বারে। প্রভৃতি অধ্যাপকবর্গের অনুগৃহীত ও সহাধ্যায়িগণের প্রশংসাভূমি ও প্রণয়ভাজন হইয়াছিলেন। তিনি, কেস্কিজে প্রবিষ্ট হইয়া, প্রথমতঃ সওর্সনরচিত হ্যায়শাস্ত্র, কেপ্লরপ্রণীত দৃষ্টিবিজ্ঞাপন, ওয়ালিসলিখিত অস্থিতপাটীগণিত এই কয়েক গ্রন্থ পাঠ করেন ; সাতিশয়পরিশ্রমসহকারে ডেকাটরচিত রেখাগণিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন ; আর, তৎকালে নক্ষত্রবিদ্যার কিছু কিছু চর্চা থাকাতে, তাহারও অনুশীলন করিয়াছিলেন। তিনি ইউক্লিডের গ্রন্থ অত্যন্ত্রমাত্র পাঠ করেন। এরূপ প্রসিদ্ধি আছে তিনি, প্রাচীন গণিতজ্ঞদিগের গ্রন্থ উত্তম রূপে পাঠ করা হয় নাই বলিয়া, উত্তর কালে অনুতাপ করিয়াছিলেন । নিউটন, কেস্কিজে অধ্যয়নকালে, আলোকপদার্থের তত্ত্বনির্ণয়াৰ্থ অত্যন্ত যত্নবান হইয়াছিলেন। ইহার পূৰ্ব্বে এই বিষয়ে লোকের অত্যন্ত্র জ্ঞান ছিল। বিখ্যাত পণ্ডিত ডেকার্ট এই সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, অন্তরীক্ষব্যাপী স্থিতিস্থাপকগুণোপেত অতিবিরল পদার্থবিশেষের সঞ্চালনবিশেষ দ্বারা আলোকের উৎপত্তি হয়। নিউটন এই মত খণ্ডন করিলেন। তিনি, অন্ধকারাবৃতগুহমধ্যে প্রবেশ পূৰ্ব্বক, বহুকোণবিশিষ্ট একখণ্ড কাচ লইয়া, কপাটের ক্ষুদ্র ছিদ্র দ্বারা তদুপরি সূর্য্যের কিরণ পাতিত করিতে লাগিলেন। এইরূপ পরীক্ষা দ্বারা দেখিতে পাইলেন, আলোক কাচের মধ্য দিয়া গমন করিয়া এ প্রকার ভঙ্গুর হইয়াছে যে, ভিত্তির উপর সপ্তবিধ বিভিন্ন বর্ণ প্রকাশ পাইয়াছে। অনন্তর, অসাধারণকৌশল পূর্বক অশেষ প্রকারে পরীক্ষা করিয়া, তিনি এই কয়েক মহোপকারক বিষয় নিৰ্দ্ধারিত করিলেন—আলোকপদার্থ কিরণাত্মক ; ঐ সকল কিরণকে বিভক্ত করিয়া অণু করা যাইতে পারে ; শুক্ল আলোকের প্রত্যেক কিরণে রক্ত, পীত, নীল এই তিন মূলীভূত কিরণ আছে : এই ত্ৰিবিধ কিরণ অপেক্ষাকৃত নূ্যনাধিক ভঙ্গুর হইয়া থাকে। নিউটনের এই অসাধারণ অভিনব আবিক্রিয়াকে দৃষ্টিবিজ্ঞানশাস্ত্রের মূলসূত্রস্বরূপ গণনা করিতে হইবেক । ১৬৬৫ খৃঃ অব্দে, কেন্থি জনগরে ঘোরতর মারাভয় উপস্থিত হওয়াতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদায় ছাত্রকে স্থানত্যাগ করিতে হইয়াছিল। নিউটনও ঐ সময়ে আত্মরক্ষার্থে আপন আলয়ে পলায়ন করিলেন। তথায় পুস্তকালয়ের অসদ্ভাবপ্রযুক্ত ইচ্ছানুরূপ পুস্তক পাঠ করিতে পাইতেন না ; এবং পণ্ডিতবর্গের অসন্নিধানপ্রযুক্ত শাস্ত্রীয় আলাপেরও সুযোগ ছিল না, তথাপি তিনি ঐ সময়ে গুরুত্বের নিয়ম অর্থাৎ বস্তুমাত্রের ভূতলাভিমুখে পাত প্রবণতার বিষয় প্রথম প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই মহীয়সী আবিক্রিয়া দ্বারা, নিউটনের ১৮