পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>brbr বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা কোনও কোনও বৃক্ষের নির্য্যাস বা আঠ অনেক প্রয়োজনে লাগে । কাগজ হইতে পেনসিল বা কালির দাগ উঠাইবার জন্য যে রবর ব্যবহৃত হয়, তাহ বটগাছের ন্যায় একপ্রকার বৃহৎ গাছের আঠা মাত্র। ধূনা, টাৰ্পিন তৈল, খদির, হিঙ্গ, কপূর, গদ ইত্যাদি সমুদয়ই বৃক্ষনিৰ্য্যাস হইতে উৎপন্ন। পোস্ত গাছের ফল চিরিয়া দিলে যে রস নির্গত হয়, তাহা হইতে অহিফেন বা আফিম প্রস্তুত হয়। সুমাত্রা, বোণিও প্রভৃতি দ্বীপে তালজাতীয় একপ্রকার বৃক্ষ জন্মে, উহার মজ্জা হইতে সাগুদান। প্রস্তুত হইয়া থাকে। পরিশ্রম—অধিকার আমরা চারিদিকে যে সমস্ত বস্তু দেখিতে পাই, ঐ সকল বস্তু কোনও না কোনও লোকের হইবে । যে বস্তু যাহার, সে ব্যক্তি পরিশ্রম করিয়া উহ। প্রাপ্ত হইয়াছে। বিনা পরিশ্রমে কেহ কোন বস্তু পাইতে পারে না, ভিক্ষা করিলে, পরিশ্রম ব্যতিরেকে, কোনও কোনও বস্তু পাওয়া যাইতে পারে ; কিন্তু ভিক্ষা করা ভদ্র লোকের কৰ্ম্ম নয়। যে ভিক্ষা করে, সে নিতান্ত নিস্তেজ ও নীচাশয়, এবং সকল লোকের ঘৃণা ও অশ্রদ্ধার ভাজন হয় । যদি কোনও ব্যক্তি কখনও পরিশ্রম না করিত, তাহা হইলে গৃহনিৰ্ম্মাণ ও কৃষিকৰ্ম্ম সম্পন্ন হইত না, খাদ্যসামগ্ৰী, পরিধেয় বস্ত্র ও পাঠ্য-পুস্তক, কিছুই পাওয়া যাইত না, সকল লোক দুঃখে কালযাপন করিত ; পৃথিবী এক্ষণে, অপেক্ষাকৃত যেরূপ সুখের স্থান হইয়াছে, সেরূপ কদাচ হইত না । পরিশ্রম না করিলে কেহ কখনও ধনবান হইতে পারে না। কেহ কেহ পৈতৃক বিষয় পাইয়। ধনবান হয়, যথার্থ বটে ; কিন্তু তাহারা পরিশ্রম না করুক, তাহদের পূৰ্ব্বপুরুষের, অর্থাৎ পিতা, পিতামহ প্রভৃতি পরিশ্রম দ্বারা ঐ ধন উপার্জন করিয়া গিয়াছেন । বিনা পরিশ্রমে এরূপ ধনলাভ অল্প লোকের ঘটে ; সুতরাং সেই কয়জন ভিন্ন, সকল লোককেই পরিশ্রম করিতে হয়। লোকে পরিশ্রম করিয়া অর্থ উপার্জন করে। অর্থ না হইলে সংসারযাত্রা সম্পন্ন হয় না । অন্ন, বস্ত্র, গৃহ প্রভৃতি সমস্ত বস্তু অর্থসাধ্য । যদি অতঃপর আর কেহ পরিশ্রম না করে, তবে যে সকল আহারসামগ্ৰী প্রস্তুত আছে, অল্প কালের মধ্যে তাহ ফুরাইয়।