পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অধ্যায়

 ১৭৫৬ খৃষ্টীয় অব্দের ১০ই এপ্রিল, সিরাজ উদ্দৌলা বাঙ্গালা ও বিহারের সিংহাসনে অধিরূঢ় হইলেন। তৎকালে, দিল্লীর অধীশ্বর এমন দুরবস্থায় পড়িয়াছিলেন যে, নূতন নবাব তাঁহার নিকট সনন্দ প্রার্থনা করা আবশ্যক বোধ করিলেন না।

 তিনি, রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হইয়া, প্রথমতঃ, আপনি পিতৃব্যপত্নীর সমুদয় সম্পত্তি হরণ করিবার নিমিত্ত, সৈন্য প্রেরণ করিলেন। তাঁহার পিতৃব্য নিবাইশ মহম্মদ, ষোল বৎসর ঢাকার অধিপতি থাকিয়া, প্রভূত অর্থসঞ্চয় করিয়াছিলেন। তিনি লোকান্তর প্রাপ্ত হইলে, তাঁহার পত্নী তদীয় সমস্ত সম্পত্তির অধিকারিণী হয়েন। ঐ বিধবা নারী, আপন সম্পত্তি রক্ষার নিমিত্ত, যে সৈন্য রাখিয়াছিলেন, তাহারা কার্য্যকালে পলায়ন করিল; সুতরাং, তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি, নির্ব্বিবাদে, নবাবের প্রাসাদে প্রেরিত হইল, এবং তিনিও সহজে আপন বাসস্থান হইতে বহিষ্কৃতা হইলেন।

 রাজবল্লভ ঢাকায় নিবাইশ মহম্মদের সহকারী ছিলেন, এবং মুসলমানদিগের অধিকারসময়ের প্রথা অনুসারে, প্রজার সর্ব্বনাশ করিয়া, যথেষ্ট ধন সঞ্চয় করেন। ১৭৫৬ খৃঃ অব্দের আরম্ভে, নিবাইশ পরলোক যাত্রা করেন। তৎকালে আলিবর্দ্দি সিংহাসনারূঢ় ছিলেন, কিন্তু বার্দ্ধদ্ক্য বশতঃ, হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিলেন। রাজবল্লভ ঐ সময়ে মুরশিদাবাদে উপস্থিত থাকাতে, সিরাজ উদ্দৌলা, তাঁহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া, তদীয় সম্পত্তি রুদ্ধ করিবার নিমিত্ত, ঢাকায় লোক প্রেরণ করেন। রাজবল্লাভের পুত্ত্র কৃষ্ণদাস, অগ্রে সংবাদ জানিতে পারিয়া, সমস্ত সম্পত্তি লইয়া, নৌকারোহণ পূর্ব্বক, গঙ্গাসাগর অথবা জগন্নাথ যাত্রার ছলে, কলিকাতায় পলায়ন করেন; এবং, ১৭ই মার্চ্চ, তথায় উপস্থিত হইয়া, তথাকার অধ্যক্ষ ড্রেক সাহেবের অনুমতি লইয়া, নগর মধ্যে বাস করেন। তিনি মনে মনে স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন, যাবৎ পিতার মুক্তিসংবাদ না পান, তত দিন ঐ স্থানে অবস্থিতি করিবেন।

 রাজবল্লভের সম্পত্তি এইরূপে হস্তবহির্ভূত হওয়াতে, সিরাজ উদ্দৌলা সাতিশয় অসন্তুষ্ট হইয়া ছিলেন; এক্ষণে, সিংহাসনারূঢ় হইয়া, কৃষ্ণদাসকে আমার হস্তে সমৰ্পণ