পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথামাল৷ \S)yჯა পুরস্কার না পাইয়া, বৃদ্ধার নামে বিচারালয়ে অভিযোগ করিলেন। বৃদ্ধ বিচারকদিগের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন ; এবং, চিকিৎসককে স্পষ্ট বাক্যে চোর না বলিয়া, কৌশল করিয়া বলিলেন, কবিরাজ মহাশয় যাহা কহিতেছেন, তাহ যথার্থ বটে । আমি অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যদি আমার চক্ষু পূৰ্ব্ববৎ হয়, কোনও দোষ না থাকে, তবে উহাকে পুরস্কার দিব । উনি কহিতেছেন, আমার চক্ষু নির্দোষ হইয়াছে ; কিন্তু, আমি যেরূপ দেখিতেছি, তাহাতে আমার চক্ষু এখনও নির্দোষ হয় নাই। কারণ, যখন আমার চক্ষুর দোষ জন্মে নাই, আমার গৃহে যে নানাবিধ দ্রব্য ছিল, সে সমস্ত দেখিতে পাইতাম। পরে, চক্ষুর দোষ জন্মিলে, সে সকল দেখিতে পাই নাই ; এখনও, সে সব দেখিতে পাইতেছি না। ইহাতে, উহার চিকিৎসায়, আমার চক্ষু নির্দোষ হইয়াছে, আমার সেরূপ বোধ হইতেছে না। এক্ষণে, আপনাদের বিচারে, যাহ। কৰ্ত্তব্য হয়, করুন । বিচারকেরা, বৃদ্ধার উত্তরবাক্যের মৰ্ম্ম বুঝিতে পারিয়া, হাস্যমুখে, তাহাকে বিদায় দিলেন, এবং, যথোচিত তিরস্কার করিয়া, চিকিৎসককে, বিচারালয় হইতে, চলিয়া যাইতে বলিলেন । শশকগণ ও ভেকগণ শশকজাতি অতি ক্ষীণজীবী ও নিতান্ত ভীরুস্বভাব জন্তু। প্রবল জন্তুগণ, দেখিতে পাইলেই, তাহাদের প্রাণবধ করিয়া, মাংস ভক্ষণ করে। এই দৌরাত্ম্য বশতঃ, তাহাদিগকে, প্রাণভয়ে, সৰ্ব্বদা সশঙ্কিত থাকিতে হয় । এজন্য, এক দিন, তাহারা পরামর্শ করিয়া স্থির করিল, সৰ্ব্বদা সশঙ্কিত থাকিয়া প্রাণধারণ করা অপেক্ষা, প্রাণত্যাগ করাই শ্রেয়ঃ । অতএব, যেরূপে হউক, অদ্যই আমরা প্রাণত্যাগ করিব । এই প্রতিজ্ঞ করিয়া, নিকটবৰ্ত্তী হ্রদে ঝাপ দিয়া প্রাণত্যাগ করিবার মানসে, সকলে মিলিয়া তথায় উপস্থিত হইল। কতকগুলি ভেক সেই হ্রদের তীরে বসিয়াছিল ; তাহারা, শশকগণ নিকটবত্তী হইবা মাত্র, ভয়ে নিতান্ত ব্যাকুল হইয়া, জলে লাফাইয়। পড়িল । ইহ দেখিয়া, সকলের অগ্রসর শশক স্বীয় সহচরদিগকে কহিল, দেখ, বন্ধুগণ । আমরা যত ভয় পাইয়াছি, যত নিরুপায় ভাবিয়াছি, তত করা উচিত নয়। তোমরা, এখানে আসিয়া, কতকগুলি প্রাণী দেখিলে ; ইহারা আমাদের অপেক্ষাও ক্ষীণজীবী ও ভীরুস্বভাব। তোমার অবস্থা যত মন্দ হউক না কেন, অন্যের অবস্থা এত মন্দ আছে যে, তাহার সহিত তুলনা করিলে, তোমার অবস্থা অনেক ভাল বোধ হইবেক ।