পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথামালা や○○ পায়, ও চুরি করিতে না পারে, এরূপ কোনও ব্যবস্থা করা আবশ্বক। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া, অবশেষে, সে সৰ্ব্বস্ব বেচিয়া ফেলিল, এবং, এক তাল সোনা কিনিয়া, কোনও নিভূত স্থানে, মাটিতে পুতিয়া রাখিল। কিন্তু, এরূপ করিয়াও, সে নিশ্চিন্ত হইতে পারিল না ; প্রতিদিন, অবাধে, এক এক বার, সেই স্থানে গিয়া, দেখিয়া আসিত, কেহ, সন্ধান পাইয়া, লইয়। গিয়াছে কি না। কৃপণ প্রত্যহ এইরূপ করাতে, তাহার ভূত্যের মনে এই সন্দেহ জন্মিল, হয় ত, ঐ স্থানে প্রভুর গুপ্ত ধন আছে ; নতুবা, উনি, প্রতিদিন, এক এক বার, ওখানে যান কেন ? পরে, এক দিন, সুযোগ পাইয়া, সেই স্থান খুড়িয়া, সে সোনার ভাল লইয়। পলায়ন করিল। পর দিন, যথাকালে, কুপণ ঐ স্থানে গিয়া দেখিল, কেহ, গৰ্ত্ত খুড়িয়া, সোনার তাল লইয়া গিয়াছে। তখন সে মাথা কুড়িয়া, চুল ছিড়িয়া, হাহাকার করিয়া, উচ্চৈঃ স্বরে, রোদন করিতে লাগিল । এক প্রতিবেশী, তাহাকে শোকে অভিভূত ও নিতান্ত কাতর দেখিয়া, কারণ জিজ্ঞাসিল, এবং, সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া, কহিল, ভাই ! তুমি, অকারণে, রোদন করিতেছ কেন ? এক খণ্ড প্রস্তর ঐ স্থানে রাখিয়া দাও ; মনে কর, তোমার সোনার তাল পূর্বের মত পোত আছে। কারণ, যখন স্থির করিয়াছিলে, ভোগ করিবে না, তখন এক তাল সোনা পোত থাকিলেও যে ফল, আর এক খান পাথর পোতা থাকিলেও সেই ফল । অর্থের ভোগ না করিলে, অর্থ থাকা না থাকা দুই সমান। সিংহ, ভালুক ও শৃগাল কোনও স্থানে, মৃত হরিণশিশু পতিত দেখিয়া, এক সিংহ ও এক ভালুক, উভয়েই কহিতে লাগিল, এ হরিণশিশু আমার। ক্রমে বিবাদ উপস্থিত হইয়া, উভয়ের যুদ্ধ উপস্থিত হইল। অনেক ক্ষণ যুদ্ধ হওয়াতে, উভয়েই অতিশয় ক্লান্ত ও নিতান্ত নিজীব হইয়া পড়িল ; উভয়েরই আর নড়িবার ক্ষমতা রহিল না। এই সুযোগ পাইয়া, এক শৃগাল আসিয়া, মৃত হরিণশিশু মুখে করিয়া, নির্বিঘ্নে চলিয়া গেল। তখন তাহারা উভয়ে, আক্ষেপ করিয়া, কহিতে লাগিল, আমরা অতি নির্বোধ, সৰ্ব্ব শরীর ক্ষতবিক্ষত করিয়া, এবং নিতান্ত নিজীব হইয়া, এক ধুর্তের আহারের যোগাড় করিয়া দিলাম।