পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথামালা 98이 বৃদ্ধ, বালকের উপহাসবাক্য শুনিয়া, পুত্রকে ঘোড়ায় চড়াইয়া দিল, আপনি সঙ্গে সঙ্গে চলিল। পথের ধারে কয়েকজন বৃদ্ধ, কোনও বিষয়ে, বাদানুবাদ করিতেছিলেন । তাহাদের মধ্যে একজন, কৃষকের পুত্রকে ঘোড়ায় চড়িয়া আর কৃষককে ঘোড়ার সঙ্গে হাটিয়া যাইতে দেখিয়া, বলিলেন, দেখ, আমি যাহা বলিতেছিলাম, তাহ যথার্থ কি না । এ কালে বৃদ্ধের সম্মান নাই ; ঐ দেখ, বেটা ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছে, আর বুড়া বাপ সঙ্গে সঙ্গে হাটিয়া যাইতেছে। এই বলিয়া, তিনি কৃষকের পুত্রকে ধমকাইয়া বলিলেন, আরে পাপিষ্ঠ, বৃদ্ধ পিতা চলিয়া যাইতেছেন, আর তুই ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছিস ; তোর কিছুই বিবেচনা নাই ? কৃষকের পুত্র অতিশয় লজ্জিত হইল, এবং আপনি ঘোড়া হইতে নামিয়া, পিতাকে চড়াইয়া লইয়৷ চলিল। খানিক দূর গেলে পর কতকগুলি স্ত্রীলোক উপস্থিত হইল । তাহার। বলিল, কে জানে এ মিন্সের কেমন আক্কেল ; আপনি ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছে, আর ছোট ছেলেটিকে হাটাইয়া লইয়া যাইতেছে। বৃদ্ধ শুনিয়া, লজ্জিত হইয়া, পুত্রকে ঘোড়ায় চড়াইয়া লইল । এইরূপে খানিক দূর গেলে পর এক ব্যক্তি কৃষককে বলিল, অহে ভাই, তোমায় জিজ্ঞাসা করি, এ ঘোড়াট কার? কৃষক বলিল, ও আমার ঘোড়া। তখন সেই ব্যক্তি বলিল, তোমার আচরণ দেখিয়া তোমার বলিয়া বোধ হইতেছে না । তোমার হইলে, তুমি উহার উপর এত নির্দয় হইতে না । কোন বিবেচনায়, এমন ছোট ঘোড়ার উপর দুইজনে চড়িয়া বসিয়াছ ? ঘোড়াকে এতক্ষণ যেমন কষ্ট দিয়াছ, অতঃপর উহাকে কাধে করিয়া লইয়া যাওয়া উচিত । এই ভৎসনা শুনিয়া, তাহারা পিতা পুত্রে ঘোড়া হইতে নামিল, দড়ি দিয়া ঘোড়ার পা বাধিল, এবং পায়ের ভিতরে বঁাশ দিয়া, কাধে করিয়া লইয়া চলিল। বাজারের নিকট একটি খাল ছিল । তাহার। ঐ খালের পুলের উপর উঠিলে, বাজারের লোকে এই তামাসা দেখিতে উপস্থিত হইল। মানুষে জীয়ন্ত ঘোড়া কাধে করিয়া লইয়া যাইতেছে, ইহ দেখিয়া, সকল লোকে এত হাসি তামাসা করিতে ও হাততালি দিতে লাগিল যে, ঘোড়া ভয় পাইয়া, জোর করিয়া, পায়ের দড়ি ছিড়িয়া ফেলিল, এবং দড়ি ছিড়িবামাত্র, খালের জলে পড়িয়া, অবিলম্বে প্রাণত্যাগ করিল। কৃষক লোকের ঠাট্ট তামাসায় যৎপরোনাস্তি বিরক্ত ও লজ্জিত হইল, এবং হতবুদ্ধি হইয়া, কিয়ৎক্ষণ সেইস্থানে দাড়াইয়া রহিল। পরে, এই ভাবিতে ভাবিতে চলিয়া গেল,