8ર ૦ বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা পারে, সে বিষয়ে সবিশেষ যত্ন করিতে লাগিলেন । বালকট বিলক্ষণ বুদ্ধিমান ছিল ; সুযোগ পাইয়া, আন্তরিক যত্ন ও সাতিশয় পরিশ্রম সহকারে বিলক্ষণ শিক্ষা করিতে লাগিল। বিশেষতঃ, যে সকল গুণ থাকিলে বালক লোকের প্রিয় ও স্নেহভাজন হইতে পারে, ঐ সুশীল সুবোধ বালক, সেই সকল গুণে অলস্কৃত ছিল । ইহা দেখিয়া, রাজমহিষী নিরতিশয় আহলাদিত হইতে লাগিলেন। তাহার উপর তদীয় স্নেহ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল । ফলতঃ, তিনি তাহাকে আপন গর্ভজাত সন্তানের ন্যায় জ্ঞান করিতেন ; এবং সেই বালকও তাহাকে আপন জননীর স্যায় জ্ঞান করিত। একদিন সে বিদ্যালয় হইতে আসিলে, রাজমহিষী তাহাকে আপনার নিকটে আসিতে বলিলেন । সে উপস্থিত হইল। তিনি অন্য অন্য দিন, তাহাকে যেরূপ হৃষ্ট ও প্রফুল্লবদন দেখিতেন, সেদিন সেরূপ দেখিলেন না। তাহাকে বিষন্ন দেখিয়া তিনি ক্রোড়ে বসাইয়। কারণ জিজ্ঞাসিলেন । বালক রোদন করিতে লাগিল । তিনি তাহার নেত্রমার্জন ও মুখচুম্বন করিয়া, সস্নেহবাক্যে বলিলেন, বৎস, কি জন্য রোদন করিতেছ, বল । তখন বালক বলিল, জননি, আজ আমি বিদ্যালয়ে যতক্ষণ ছিলাম, কেবল রোদন করিয়াছি । সেখানে গিয়া শুনিলাম, আমাদের শিক্ষক মরিয়াছেন ; দেখিলাম, তাহার স্ত্রী ও সন্তানেরা রোদন করিতেছেন । সকলে বলিতেছে, তাহারা বড় দুঃখী ; খাওয়া পর চলে, এমন সঙ্গতি নাই ; এবং সাহায্য করে, এমন আত্মীয়ও নাই। এই সকল দেখিয়া ও শুনিয়া, আমার বড় দুঃখ হইয়াছে। মা, তোমায় তাহাদের কোনও উপায় করিয়া দিতে হইবে। বালকের মুখে এই সকল কথা শুনিয়া, রাজমহিষীর অন্তঃকরণে করুণার উদয় হইল । তিনি, অবিলম্বে এক পরিচারককে ডাকাইয়া, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে পাঠাইয়া দিলেন ; এবং বালকের মুখচুম্বন করিয়া বলিলেন, বৎস, অল্প বয়সে তোমার যে এরূপ বুদ্ধি ও বিবেচনা হইয়াছে, ইহাতে আমি কি পৰ্য্যন্ত প্রীত হইলাম, বলিতে পারি না। যাহাতে তোমার শিক্ষকের পরিবার ক্লেশ না পায়, তাহ আমি অবশু করিব ; তুমি সেজন্য উদ্বিগ্ন হইও না । কিয়ৎক্ষণ পরে, প্রেরিত পরিচারক প্রত্যাগমন করিল ; শিক্ষকের মৃত্যু ও তদীয় পরিবারের অনুপায় বিষয়ে, বালক যাহা বলিয়াছিল, সে সমুদয় সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া, রাজমহিষীর নিকট জানাইল । তখন তিনি, সেই বালক দ্বার, শিক্ষকের পত্নীর নিকট,
