পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা হইত। দুর্ভাগ্যক্রমে, ১৭৮৩ খৃষ্টাব্দের শীতকালে ঐ প্রদেশে ছভিক্ষ উপস্থিত হওয়াতে, দিনান্তেও তাহাদের আহার পাওয়া দুর্ঘট হইয়া উঠিল । ফলতঃ, এই সময়ে শীতে ও অনাহারে, তাহারা যৎপরোনাস্তি কষ্ট পাইতে লাগিলেন। পিতামাতার দুরবস্থা দেখিয়া এবং প্রাণপণে চেষ্টা ও পরিশ্রম করিয়াও, তাহাদের আহারাদি সংগ্রহে অসমর্থ হইয়া, কন্যা অতিশয় দুঃখিত ও শোকাভিভূত হইল ; এবং কি উপায়ে তাহাদের কষ্ট নিবারণ হয়, অহোরাত্র কেবল এই চিন্তা করিতে লাগিল । একদিন কথাপ্রসঙ্গে কোনও ব্যক্তি বলিল, অমুক ডাক্তার ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন, যদি কেহ আপন সম্মুখের দন্ত দেয়, তাহা হইলে তিনি তিন গিনি (১) করিয়া, প্রত্যেক দন্তের মূল্য দিবেন ; কিন্তু ডাক্তার স্বয়ং সেই ব্যক্তির মুখ হইতে দন্ত তুলিয়া লইবেন। এই ঘোষণার কথা শুনিয়া, কন্যা মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিল, আমি নানা চেষ্টা দেখিতেছি, এবং যথেষ্ট কষ্টভোগও করিতেছি, তথাপি পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে, পিতা মাতার আহারের সংগ্ৰহ করিতে পারিতেছি না। এক্ষণে, এই এক সহজ উপায় উপস্থিত । এই উপায় অবলম্বন করিলে, কিছু দিনের নিমিত্ত র্তাহাদের কষ্ট দূর হইবে । অতএব আমি অবিলম্বে ডাক্তারের নিকটে গিয়া, সম্মুখের দন্ত দিয়া, গিনি আনি । মনে মনে এই আলোচনা করিয়া, কন্যা, ডাক্তারের নিকট উপস্থিত হইল ; এবং বলিল, মহাশয়, আপনি যে ঘোষণা করিয়াছেন, তদনুসারে আমি আপনার নিকট দন্ত বিক্রয় করিতে আসিয়াছি ; যে কয়টির প্রয়োজন হয়, তুলিয়া লইয়া, আমায় অঙ্গীকৃত মূল্য দিন। ডাক্তার স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন, কেহই তাহার ঘোষণা অনুসারে, দন্ত বিক্রয় করিতে আসিবে না । এক্ষণে, এই কন্যাকে দন্তবিক্রয়ে উদ্যত দেখিয়া, চমৎকৃত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, অয়ি বালিকে, তুমি কি কারণে ঈদৃশ ক্লেশকর বিষয়ে সম্মত হইতেছ? কাচা দাত তুলিয়া লইলে কত কষ্ট হয়, তোমার সে বোধ নাই ; বিশেষতঃ, তুমি চিরদিনের জন্ত, অতিশয় কদাকার হইয়া যাইবে । তুমি বালিকা ; এরূপে দন্ত বিক্রয় করিয়া টাকা লইবার প্রয়োজন কি, বুঝিতে পারিতেছি না। কি কারণে দন্ত বিক্রয় করিয়া টাকা লইতে আসিয়াছে, কন্য। সজলনয়নে সবিশেয সমস্ত ডাক্তারের গোচর করিল। ডাক্তার অতিশয় দয়ালু ও সদ্বিবেচক ছিলেন। তিনি তদীয় পিতৃভক্তি ও মাতৃভক্তির ঐকান্তিকতা দর্শনে মুগ্ধ হইলেন ও কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হইয়া (১) ইংলণ্ড প্রভৃতি দেশে প্রচলিত স্বর্ণমুদ্রা, মূল্য ১৫২ ৷