পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিঃস্পৃহত৷ ইংলণ্ডদেশীয় ডিউক অব মণ্টেগু অতিশয় দয়ালু ও দীনপ্রতিপালক ছিলেন। তাহার এই রীতি ছিল, নিরাশ্রয় ব্যক্তিদিগের দুঃখমোচনের নিমিত্ত সৰ্ব্বদা প্রচ্ছন্নবেশে ভ্রমণ করিতেন। এক দিন প্রাতঃকালে তিনি ঐ অভিপ্রায়ে এক অনাথমণ্ডলীতে উপস্থিত হইলেন ; এবং এক বৃদ্ধ নারীকে সম্মুখে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এক্ষণে অতিশয় দুঃসময় উপস্থিত ; এরূপ সময়ে তুমি কিরূপে দিনপাত কর। যদি আবশ্যক থাকে, বল, আমি তোমার সাহায্য করিতে প্রস্তুত আছি। বুদ্ধা বলিল, জগদীশ্বরের কৃপায় আমি স্বচ্ছন্দে আছি ; আমার কোনও অপ্রতুল নাই। যদি দীন দেখিয়া, দয়া করিয়া, দিতে ইচ্ছা থাকে, ঐ গৃহে এক অনাথ আছে, তাহাকে সাহায্যদান করুন ; অনাহারে তাহার প্রাণপ্রয়াণের উপক্রম হইয়াছে। বৃদ্ধার বাক্য শুনিয়া, ডিউক মহোদয় নির্দিষ্ট গৃহে প্রবিষ্ট হইলেন ; এবং সেই অনাথ উপায়বিহীন নারীকে কিছু দিয়া, পুনরায় বৃদ্ধার নিকটে উপস্থিত হইয়া বলিলেন, যদি তোমার আর কোনও প্রতিবেশীর অপ্রতুল থাকে, বল। তাহার, পুনরায় সেই বুদ্ধার নিকটে উপস্থিত হইবার উদ্দেশ্য এই যে, তাহাকেও কিছু দিবেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন, আর কাহারও অপ্রতুল আছে কি না, এই জিজ্ঞাসা করিলে, সে অবশ্য আপন অবস্থা জানাইবে । কিন্তু, বৃদ্ধ বলিল, হা মহাশয়, আমার আর এক প্রতিবেশী আছে ; সে অতিশয় দুঃখ ও অতিশয় সৎস্বভাব । ডিউক বলিলেন, অয়ি বৃদ্ধে, আমি এ পর্য্যন্ত তোমার মত নি:স্পৃহ ও সাধুশীল স্ত্রীলোক দেখি নাই। যদি তুমি বিরক্ত না হও, আমি তোমার নিজের অবস্থা সবিশেষ জানিবার অভিলাষ করি। তখন বৃদ্ধ বলিল, আমি নিতান্ত দুঃখিনী নহি ; আমি কাহারও কিছু ধারি না ; তদ্ভিন্ন আমার পনর টাকা সংস্থান আছে। এই কথা শুনিয়া, ডিউক অতিশয় গ্রীত ও চমৎকৃত হইলেন ; এবং মনে মনে তাহার নি:স্পৃহতা ও সাধুশীলতার অশেযবিধ প্রশংসা করিয়া বলিলেন, তোমার যে সংস্থান আছে, যদি আমি তাহার কিছু বৃদ্ধি করিয়া দি, বোধ করি, তাহাতে তোমার আপত্তি হইতে পারে না। বৃদ্ধ বলিল, আপনি যে আজ্ঞা করিতেছেন, তাহাতে আমার সবিশেষ আপত্তি নাই। কিন্তু, আপনি যাহা দিতে চাহিতেছেন, তাহা আমার যত আবশ্যক, অনেকের তদপেক্ষা অনেক অধিক আবশ্বক। যদি আমি উহা লই, তাহাদিগকে বঞ্চনা করা হয় ; আমার বিবেচনায় এরূপ লওয়া অতি গৰ্হিত কৰ্ম্ম ।