পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিব্ৰতা কামিনী এবরার্ডনামক এক ব্যক্তি দেশ পর্য্যটন করিয়াছিলেন। তিনি পৰ্য্যটনকালে যে দেশে যে সমস্ত অসামান্ত বিষয় দেখিতেন, তৎসমুদয় লিপিবদ্ধ করিয়া, এক আত্মীয়ের নিকট পাঠাইতেন। র্তাহার লিখিত পত্র সকল ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে প্রচারিত হয়। তন্মধ্যে এক পত্রে পতিপরায়ণতার এক অভূতপূৰ্ব্ব উদাহরণ উল্লিখিত হইয়াছে। ঐ পত্রের মৰ্ম্ম હરે আমি, আলপস্ পৰ্ব্বতের নানা অংশে ও জৰ্ম্মনি দেশে পর্য্যটন করিয়া, বিবেচনা করিলাম, ইড্রিয়াতে যে পারদের আকর অাছে, তাহা না দেখিয়া স্বদেশে প্রতিগমন কর। উচিত নহে। তদনুসারে, এক পথদর্শকের সমভিব্যাহারে, আকরে প্রবিষ্ট হইলাম । যাহার কৰ্ম্ম করিতেছিল, তাহদের দুরবস্থা দেখিয়া, আমার যেরূপ কষ্টবোধ হইল, তাহার বর্ণনা করিতে পারি না। আমি জন্মাবচ্ছিন্নে তাহদের মত হতভাগ্য লোক দেখি নাই । উৎকট অপরাধবিশেযে, রাজদণ্ড অনুসারে, এই ভয়ঙ্কর স্থানে যাবজ্জীবন কৰ্ম্ম করিতে হয়। তাহারা, এই স্থানে প্রবিষ্ট হইয়া, এ জন্মে আর সূর্য্যের মুখ দেখিতে পায় না। যাহার তাহাদের উপর কর্তৃত্ব করে, তাহারা অত্যন্ত নিষ্ঠুর, প্রহার করিয়া কৰ্ম্ম করায়। সৰ্ব্বদা পীরা ঘাটিয়া, তাহদের আকার অঙ্গারের ন্যায় মলিন, এবং শরীর নিতান্ত শীর্ণ ও নিস্তেজ হইয়া গিয়াছে। তাহার রাজব্যয়ে আহার পাইয়া থাকে ; কিন্তু, অল্প দিনের মধ্যেই, এরূপ উৎকট অগ্নিমান্দ্য ঘটে যে, কিছুমাত্র আহার করিতে পারে না ; এবং শরীরের সন্ধিস্থল সকল এরূপ সঙ্কুচিত হইয়া যায়, যে সচরাচর প্রায় দুই বৎসরের অধিক বঁাচে না । এই হৃদয়বিদারণ নিদারুণ ব্যাপার দর্শনে, আমার অন্তঃকরণে অতি বিষম শোক উপস্থিত হইল। আমি আক্ষেপ করিয়া মনে মনে কহিতে লাগিলাম, মনুষের ন্যায় নির্দয় ও নির্বিবেক জন্তু ভূমণ্ডলে আর নই ; দুর্ভর অর্থলালসার বশীভূত হইয়া, দুর্বলদিগের উপর কি ভয়ানক অত্যাচার করিয়া থাকে। এই সময়ে, পশ্চাদ্ভাগ হইতে কোন ব্যক্তি, আমার নামগ্রহণ ও সপ্রণয় সম্ভাষণ করিয়া, জিজ্ঞাসা করিল, ভ্রাতঃ ! তুমি কেমন আছ । সেখানে, আমায় এ রূপে সম্ভাষণ করে, ঈদৃশ ব্যক্তি কেহ ছিল না, সুতরাং আমি চকিত হইয়া মুখ ফিরাইলাম ; দেখিলাম, তথাকার এক কৰ্ম্মকর আমার নিকটে আসিতেছে। সে অবিলম্বে আমার সম্মুখবর্তী হইয়া কহিল, কি হে, আমায় চিনিতে পারিতেছ না। কিয়ৎক্ষণ অনিমিষ নয়নে নিরীক্ষণ করিয়া, আমি ঐ ব্যক্তিকে চিনিতে পারিলাম, ᏬᏄ