পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t\eo বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা কৌতুহলাক্রান্ত চিত্তে ও অবিচলিত নয়নে, এই অদ্ভুত ব্যাপার অবলোকন করিতেছিল। তাহার, দুই জনকে জলমগ্ন হইতে দেখিয়া, উহাদের উদেশের নিমিত্ত, একখান বোট খুলিয়া দিল । কিয়ৎ ক্ষণ, চারি দিক নিরীক্ষণ করিয়া, বোটের লোকেরা দেখিতে পাইল, এণ্টোনিয়, এক হস্তে রজরকে দৃঢ় রূপে ধরিয়া আছে, অপর হস্ত দ্বারা বোটের নিকট আসিবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে। নাবিকের তদর্শনে, কারুণ্যরসে পরিপূর্ণ হইয়া, যৎপরোনাস্তিবলপূৰ্ব্বক ক্ষেপণীচালন করিয়া, তাহদের নিকট উপস্থিত হইল, এবং তৎক্ষণাৎ উভয়কে বোটে উঠাইয়া লইল । এই সময়ে, এণ্টোনিয় এরূপ নিবীৰ্য্য হইয়া পড়িয়াছিল যে, আর এক মুহূৰ্ত্ত বিলম্ব হইলে, উভয়ে নিঃসন্দেহ জলমগ্ন হইত। তোমরা আমার বন্ধুকে রক্ষা কর, এইমাত্র বলিয়া, সে অচেতন হইল। বোধ হইতে লাগিল, যেন তাহার প্রাণত্যাগ হইয়াছে। রজর বোটে উঠাইবার সময় অচেতন ছিল, সে কিয়ৎ ক্ষণ পরে, নয়নদ্বয় উল্মীলিত করিল, এবং এণ্টোনিয়কে মৃত্যুলক্ষণাক্রান্ত পতিত দেখিয়া, শোকে একান্ত বিকলচিত্ত হইল, হায় কি সৰ্ব্বনাশ হইল বলিয়া, এণ্টোনিয়ের অচেতন কলেবর আলিঙ্গন করিয়া, অশ্রুজলে ভাসাইয়া দিল, এবং নিতান্ত অধৈর্য্য হইয়া, আকুল বচনে কহিতে লাগিল, বয়স্থ, আমিই তোমার প্রাণবধ করিলাম, তুমি যে আমার দাসত্বমোচন ও প্রাণরক্ষার নিমিত্ত এত যত্ন ও আয়াস করিয়াছিলে, আম হইতে তাহার এই পুরস্কার পাইলে । আমি অতি নৃশংস ও নরাধম, নতুবা এখন পর্য্যন্ত জীবিত রহিয়াছি কেন ; তোমার প্রাণবিয়োগ দেখিয়া কি আমায় প্রাণধারণ করিতে হয় ; তোমায় হারাইয়। আমি প্রাণধারণের কোন ফলোদয় দেখিতেছি না। এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সে সহসা দণ্ডায়মান হইল, এবং যদি নাবিকের বলপূৰ্ব্বক নিবারণ না করিত, তাহা হইলে সমুদ্রে বাপ দিয়া নিঃসন্দেহ প্রাণত্যাগ করিত। নাবিকের। নিবারণ করাতে, সে যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া কহিতে লাগিল, কেন তোমরা আমায় নিবারণ করিতেছ, আমি এরূপ বন্ধুর বিরহে কখনই প্রাণধারণ করিতে পারিব না ; আমার জন্তেই উহার প্রাণনাশ হইয়াছে। এই বলিয়া, সে এণ্টোনিয়ের শরীরের উপর পতিত হইয়া কহিতে লাগিল, এণ্টেনিয় । আমি অবশ্যই তোমার অনুগামী হইব, কেহই আমায় নিবারণ করিয়া রাখিতে পরিবেক না। হে নাবিকগণ, তোমাদিগকে ঈশ্বরের দোহাই, তোমরা আমায় আর নিবারণ করিও না, আমায় প্রাণাধিক বন্ধুর অনুগামী হইতে দাও ।